December 23, 2024
‘আয়নাঘরে’ সাজ বদল, নষ্ট গুমের আলামত

‘আয়নাঘরে’ সাজ বদল, নষ্ট গুমের আলামত

অক্টো ৪, ২০২৪

শেখ হাসিনার শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটক রাখার গোপন বন্দিশালার অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। এ বন্দিশালা “আয়নাঘর” নামে পরিচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে এর অস্তিত্ব অস্বীকার করলেও, সম্প্রতি গুম-সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির পরিদর্শনে এর সত্যতা উঠে এসেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গুমের ঘটনায় ৪০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্তের সময় পরিদর্শিত আয়নাঘরে বন্দিশালার চিহ্ন ও দেয়ালে লেখা অনেক তথ্য মুছে দেওয়া হয়েছে। কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা যেসব প্রমাণ পেয়েছি, তা অনেকাংশেই ভুক্তভোগীদের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু ডিজিএফআই বন্দিশালার কিছু পরিবর্তন করেছে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ মুছে ফেলেছে।’

২০১৯ সালে গুম হওয়া ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা জানান, তাকে ঢাকা সেনানিবাসের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) আয়নাঘরে আটক রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সাবেক ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহিল আমান আযমীও একই অভিযোগ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এসব অভিযোগ কেবল কথিত ছিল, তবে এই প্রথম কমিশনের মাধ্যমে আয়নাঘরের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেল।

গোপন বন্দিশালা সংরক্ষণ প্রসঙ্গে মাইকেল চাকমা বলেন, “যদি গোপন বন্দিশালা ভেঙে ফেলা হয়, তাহলে এর মানে অপকর্মের দায় সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর ওপর বর্তাবে। তারা সরকারের দোষ আড়াল করার চেষ্টা করছে।” মানবাধিকার কর্মীরাও গোপন বন্দিশালাগুলো সংরক্ষণের আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা যায়।

কমিশনের পরিদর্শনে জানা গেছে, ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘরে ২২টি কুঠুরি ছিল, যার মধ্যে দুটি ‘ভিআইপি’ সেল ছিল। ভুক্তভোগীরা এই বন্দিশালায় তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। মানবাধিকার সংস্থা এইচআরপিবি’র প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ বলেছেন, “আলমত ধ্বংস করা অপরাধের অংশ। বন্দিশালাগুলো সংরক্ষণ করা উচিত, যেন ভবিষ্যতে এসব অপরাধের বিচার করা যায়।”

শেখ হাসিনার শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ঘটনা তদন্তে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, র‍্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি এবং সিটিটিসির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে। গোপন বন্দিশালার বিষয়ে তদন্ত করতে কমিশন এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা গোপন বন্দিশালাগুলো সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছেন, যাতে তারা জানতে পারেন তাদের প্রিয়জনদের কী ধরনের পরিস্থিতিতে আটক রাখা হয়েছিল এবং কীভাবে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল।

Leave a Reply