December 23, 2024
দ্রুত সংস্কার শেষে ভোটের পক্ষে বামপন্থি দলগুলো

দ্রুত সংস্কার শেষে ভোটের পক্ষে বামপন্থি দলগুলো

সেপ্টে ২৮, ২০২৪

বামপন্থি দলগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, বিশেষ করে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ কোন দিকে মোড় নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে তারা। বামপন্থি নেতারা দ্রুত এই সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার তাগিদ দিচ্ছেন। এ মুহূর্তে সরকারকে তাদের সকল কার্যক্রমে সহযোগিতা করার নীতিতেই এগোচ্ছে বাম দলগুলো।

বামপন্থি নেতারা বলেন, সরকার ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ‘চেতনা’ অনুযায়ী সংস্কারের পথে এগোচ্ছে। ইতিমধ্যে ছয়টি আলাদা কমিশন গঠন করা হয়েছে, যাদের কাজ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে তিন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। পরে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে সরকার।

তবে সংবিধান, নির্বাচন কমিশন এবং বিচার বিভাগের সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচিত সরকার ও সংসদের প্রয়োজন হবে বলে মনে করে বামপন্থি দলগুলো। সুষ্ঠুভাবে এই কার্যক্রম শেষ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় সহযোগিতা অপরিহার্য। সেই বিবেচনায় বাম দলগুলো সংস্কার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে।

বাম দলগুলোর নিজস্ব কিছু চিন্তাভাবনাও রয়েছে। তারা সংস্কার-সংক্রান্ত আলাদা প্রস্তাব তৈরি করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। শিগগিরই এই প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে বাম প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরুর পরিকল্পনাও রয়েছে।

যদিও বাম দলগুলো সরকারের প্রতি কিছুটা ক্ষুব্ধ। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর সেনাপ্রধানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে বাম দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক বাম দলগুলো কোনো আমন্ত্রণ পায়নি।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৩ আগস্টের বৈঠকে শুধু বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) আমন্ত্রিত হয়েছিল। পরে অন্য বাম দলগুলোকে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সরকার এই দলগুলোর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে বলে বামপন্থি দলগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, তবে তারা সরকারের কার্যক্রমে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এই অভ্যুত্থান ঘটে, যেখানে বাম দলগুলোও সক্রিয় অংশ নেয়।

বাম দলগুলো মনে করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ অন্যান্য সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় ও সমন্বয় করা উচিত। তারা আশঙ্কা করছে, যদি ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একসঙ্গে না থাকে, তবে গণআন্দোলনের চেতনা নস্যাৎ হতে পারে।

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের পদক্ষেপগুলোর প্রতি তাদের সমর্থন থাকবে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সহযোগিতা করবে। তবে সংস্কারের বিষয়ে সরকারের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া এবং ঐকমত্যে পৌঁছানো।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে হবে এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে বাকি কাজগুলো ছেড়ে দেওয়া উচিত।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, তারা চায় সরকার সঠিক পথে থেকে একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করুক এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত, যাতে নতুন নির্বাচিত সরকার সংবিধান প্রণয়নসহ রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারে।

Leave a Reply