এই কারিনাকে কে চিনত
‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’: কারিনা কাপুরের প্রথম প্রযোজনায় রহস্যের ধূসর আবহ
প্রচণ্ড মানসিক টানাপোড়েন নিয়ে ব্রিটিশ-ভারতীয় গোয়েন্দা জাসমিত ভারমা (ওরফে জ্যাস) নতুন শহর বাকিংহামে কাজ করতে আসে। সেখানে সে একটি মিসিং কেসের তদন্তে যুক্ত হয়। ১০ বছরের শিশু ইশপ্রীত কোহলি নিখোঁজ হওয়ার পরদিনই তার মরদেহ পাওয়া যায়। যদিও খুনি দ্রুত ধরা পড়ে এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করে, জাসমিতের সন্দেহ মেটেনি। সহকর্মী হার্ডি প্যাটেলের আচরণ নিয়ে তার প্রশ্ন উঠলেও প্রমাণের অভাবে কিছু করতে পারে না। এরপরও ঘটনাটি মন থেকে সরাতে পারে না জাসমিত। আসল রহস্য উদঘাটনে সে খুঁজতে থাকে আরও ক্লু, যা তাকে সত্যিকারের খুনির কাছে নিয়ে যেতে পারে।
শহরের ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষ, অভিবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ঘৃণা এবং এসব থেকে সৃষ্ট ভয় ও রাগ ধীরে ধীরে ইশপ্রীতের মৃত্যুর আসল কারণের দিকে নিয়ে যায়। একের পর এক রহস্য উন্মোচিত হতে থাকে, যা বারবার চমকে দেয় জাসমিতকে।
পরিচালক হংসল মেহতার ‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’ সিনেমাটি তার আগের কাজগুলোর মতোই একটি নীরব ও অন্ধকার দিক তুলে ধরেছে। এখানে গল্পকে হালকা করার চেষ্টা করা হয়নি, আবার জোর করে ভয় ধরানো উপাদানও ঢোকানো হয়নি। কাহিনি ধীর গতিতে এগিয়েছে, তবে একটি টানটান উত্তেজনার অভাব ছিল। যদিও সিনেমার ঘটনাপ্রবাহ বেশ জটিল, তবে অনেক সামাজিক ইস্যু — যেমন মাদক, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব, পারিবারিক নির্যাতন ইত্যাদি— একসঙ্গে দেখানোর চেষ্টা কখনো খুনের মূল ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে। ফলে কিছু কিছু জায়গায় চিত্রনাট্যে ফাঁক থেকে গেছে, যা গল্পের দৃঢ়তাকে কিছুটা প্রভাবিত করেছে।
তবে কারিনা কাপুর খানের অভিনয় এই সিনেমার মূল আকর্ষণ। তার নো-মেকআপ লুক এবং গোয়েন্দা চরিত্রে তার সাবলীল অভিনয় দর্শকের নজর কাড়বে। বাণিজ্যিক সিনেমা এবং গ্ল্যামারাস চরিত্র থেকে বেরিয়ে এসে তিনি এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা প্রশংসার দাবিদার। পাশাপাশি, এটি তার প্রথম প্রযোজিত সিনেমা হওয়ায় কারিনার জন্য এটি একটি বড় অর্জন।
অন্যান্য অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে রণভীর ব্রার তার ছেলেহারা বাবার চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন। গোয়েন্দা চরিত্রে অ্যাশ টেন্ডনের পারফরম্যান্সও দারুণ ছিল, যদিও মায়ের চরিত্রে প্রভলিন সাধুর অভিনয় কিছুটা সাদামাটা মনে হয়েছে। কিথ অ্যালেনের ছোট চরিত্র হলেও তার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’-এর গল্প একটি খুনের তদন্ত দিয়ে শুরু হলেও এর গভীরে রয়েছে শোককে শক্তিতে পরিণত করার চেষ্টা এবং অবদমিত ক্ষোভের বিস্ফোরণ। এটি কেবল একটি থ্রিলার নয়; বরং রহস্যময় ঘটনার পাশাপাশি মানবিক আবেগের প্রকাশও দেখা গেছে। যদিও ধীরগতির গল্প, তবে শেষ পর্যন্ত রহস্যের সমাধান হয়, যা দর্শককে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখে। তাই, শোক ও ধূসর আবহে মোড়ানো এ সিনেমাটি পরিচালক যা দেখাতে চেয়েছেন, তাতে তিনি সফল বলা যায়।