কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি থাকবে কি, জানতে চেয়ে চিঠি
দেশের কৃষিতে বর্তমানে ৯৮ শতাংশ জমি চাষাবাদে যন্ত্র ব্যবহৃত হলেও, শস্য কর্তন ও মাড়াইয়ে এখনো ৮০ শতাংশ জমি সনাতন পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। কৃষির যান্ত্রিকীকরণ বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। তবে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। ফলে উচ্চ প্রযুক্তির কৃষিযন্ত্র আমদানিকারকেরা আমদানি পরিকল্পনা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন, বিশেষ করে আমন মৌসুম আসন্ন হওয়ায় এটি গুরুতর হয়ে উঠেছে।
কম্বাইন হারভেস্টারসহ উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্র আমদানির জন্য সরবরাহকারীকে চার মাস আগে অর্ডার জানাতে হয়। এ প্রেক্ষিতে দেশের শীর্ষ চারটি কম্বাইন হারভেস্টার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ২১ আগস্ট কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে চিঠি দিয়ে সরকারের দিকনির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। বর্তমানে দেশে প্রায় ছয় হাজার কম্বাইন হারভেস্টার চালু রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। মাত্র ২০ শতাংশ জমির ধান কাটতে এই যন্ত্র ব্যবহার হয়, যা ধান কাটার খরচ ৫০ শতাংশ কমায় এবং উৎপাদন ৭ শতাংশ বাড়ায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের পরিচালক মো. সফিকুজ্জামান জানান, সম্প্রতি তাঁদের ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি রাখার সুপারিশ এসেছে এবং এ বিষয়ে শিগগিরই স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হবে।
প্রকল্পটি ২০২০-২৫ মেয়াদে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার বাজেটে বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার আওতায় ১০ ধরনের কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এর মধ্যে কম্বাইন হারভেস্টার, ফসল কাটার যন্ত্র রিপার, ধানের চারা রোপণের যন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার, বীজ রোপণ যন্ত্র সিডার, এবং ধানমাড়াই যন্ত্র পাওয়ার থ্রেসার উল্লেখযোগ্য। হাওরের কৃষকরা যন্ত্রের দামের ৭০ শতাংশ এবং অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকরা ৫০ শতাংশ ভর্তুকি পান।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফরি) ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি নীতিপত্রে উল্লেখ করে, ২০০৫ সালের পর থেকে কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি ও পিছিয়ে থাকা অঞ্চলে যান্ত্রিকীকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, কারণ কৃষি খাতে শ্রমিক সংখ্যা কমছে। ২০০৫ সালে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৫০ শতাংশ ছিল, যা ২০২২ সালে ৪০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। এছাড়া, মজুরি ব্যয় প্রতিবছরই বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আকস্মিক বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে দ্রুত ধান কাটার জন্য উচ্চ প্রযুক্তির কৃষিযন্ত্রের প্রয়োজন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এম আবদুস সাত্তার মণ্ডল জানান, বিশেষ করে বড় ও দামি কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি এখনো প্রয়োজন, কারণ কৃষকদের পক্ষে এগুলো কেনা কঠিন। তবে ভর্তুকির হার নিয়ে আলোচনা হতে পারে।