
মাধবদী ও খোকসায় পৃথক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেল অর্ধশতাধিক দোকান
নরসিংদীর মাধবদী ও কুষ্টিয়ার খোকসায় শুক্রবার (গতকাল) সকালে দুইটি পৃথক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অর্ধশতাধিক দোকান পুড়ে গেছে। এতে অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাধবদী বাজারে ভয়াবহ আগুন: পুড়ল ৬৭টি দোকান
শুক্রবার ভোর ৫টা নাগাদ মাধবদী বাজারের মুড়িপট্টি এলাকায় প্রথম আগুন লাগে। স্থানীয়রা জানান, একটি মুদি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তা আশপাশের দোকানগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে।
- ফায়ার সার্ভিস সকাল ৫টা ১২ মিনিটে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
- আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে সকাল সোয়া ১০টায়।
মাধবদী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইনচার্জ মো. রায়হান জানান, তাদের সঙ্গে নরসিংদী ও পলাশ ফায়ার স্টেশনের আরও চারটি ইউনিট যোগ দেয় আগুন নিয়ন্ত্রণে।
ক্ষতির বিবরণ:
স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্র অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায়—
- ১৪টি মুদি দোকান
- ১১টি স্বর্ণালংকার তৈরির দোকান
- ৯টি ইলেকট্রনিক ও প্লাস্টিকের দোকান
- ৫টি স্টেশনারি দোকান
- অন্যান্য ৫টি দোকানসহ মোট ৪৫টি দোকান, তবে কিছু ব্যবসায়ীর দাবি, মোট ৬৭টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্বর্ণালংকারের দোকানে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে, ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণে সময় লাগে।
মুদি দোকানি আবদুল আজিজ মৌলভী বলেন, “আমার সবকিছুই শেষ। পুরো দোকান ভস্মীভূত হয়ে গেছে।” তাঁর মতে, প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সময়মতো এলেও আশপাশে পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে সমস্যা হয়।
খোকসায় আগুনে পুড়ল আরও ৫টি দোকান
একই দিন সকাল ১০টার দিকে, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর বাজারে অবস্থিত একটি টেলিভিশনের শোরুম থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
শুরুর সময় বাজারের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ ছিল। পথচারীরা ধোঁয়া দেখে দোকান মালিকদের মোবাইল ফোনে খবর দেন। পরে খোকসা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে স্থানীয়দের সহায়তায় দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্ষতির বিবরণ:
এই ঘটনায় পুড়ে যায়—
- সিদ্দিকুর রহমানের টিভি শোরুম
- ২টি ওষুধের দোকান
- ২টি ক্রীড়া সামগ্রীর দোকান
ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টাকা। দোকান মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “দোকান বন্ধ করার সময় আমি নিজেই মেইন সুইচ বন্ধ করে যাই। সিসিটিভির চার্জার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।”
একদিনেই দুটি অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া এই অর্ধশতাধিক দোকান শুধু ব্যবসায়িক ক্ষতি নয়, অনেক পরিবারকেই পথে বসিয়ে দিয়েছে।
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, পানি সরবরাহের অভাব, এবং দোকানে অতি দাহ্য উপকরণের উপস্থিতি—সবকিছুই এ ধরনের দুর্ঘটনাকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
এখন সময় এসেছে সচেতনতা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে বাজারগুলোতে আগুন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার।