
গাজায় কার্যকর যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা চায় হামাস
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে গাজায় যুদ্ধাবসানের সম্ভাবনা জোরালো হলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো অনিশ্চিত। যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি নিয়ে স্পষ্ট নিশ্চয়তা চেয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস জানিয়েছে, তারা এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি এবং প্রস্তাবটি নিয়ে অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
হামাসের শর্ত: যুদ্ধবিরতি নয়, চাই স্থায়ী শান্তির নিশ্চয়তা
হামাসের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তারা কেবল সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়; বরং এমন একটি চুক্তিই চায়, যা স্থায়ীভাবে যুদ্ধের ইতি টানবে। গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকায় হামাসের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত মতামত আসেনি।
শুক্রবার ভোরে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, প্রস্তাবটি পর্যালোচনার জন্য অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা চলছে। আলোচনা শেষে তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাবে।
ইসরায়েলের অবস্থান: যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুতি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া চুক্তি অনুমোদনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
অবগত একটি সূত্র জানায়, আজকের মধ্যেই হামাসের প্রতিক্রিয়া চায় ইসরায়েল। যদি সাড়া ইতিবাচক হয়, তবে একটি ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল পরোক্ষ আলোচনায় অংশ নিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারে।
যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি: ধাপে ধাপে জিম্মি বিনিময় ও সেনা প্রত্যাহার
চলমান প্রস্তাব অনুযায়ী:
- হামাস ধাপে ধাপে ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি দেবে এবং
- ১৮ জনের মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করবে,
- এর বিনিময়ে ইসরায়েল শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
অনুমান করা হচ্ছে, গাজায় থাকা অবশিষ্ট ৫০ জন জিম্মির মধ্যে প্রায় ২০ জন এখনও জীবিত।
এ ছাড়া:
- গাজায় অবিলম্বে ত্রাণ ঢোকার অনুমতি দেবে ইসরায়েল,
- সেনাবাহিনী ধাপে ধাপে গাজা উপত্যকার কিছু অংশ থেকে সরে আসবে,
- একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে তাৎক্ষণিকভাবে আলোচনা শুরু হবে।
মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা: যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের সমন্বিত প্রচেষ্টা
এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার। মিসরীয় নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এমন একটি নিশ্চয়তা আদায়ের চেষ্টা করছে, যা হামাসকে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণে রাজি করাবে। এর মাধ্যমে গাজায় সংঘাতের একটি দীর্ঘমেয়াদি অবসান সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিপ্রেক্ষিত: অব্যাহত হামলা ও মানবিক বিপর্যয়
যদিও কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে, তবুও ইসরায়েলের সাম্প্রতিকতম হামলায় গতকাল গাজায় অন্তত ৫৯ জন নিহত হয়েছেন, বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চলমান এই যুদ্ধ ইতোমধ্যে বহু প্রাণহানি ঘটিয়েছে এবং অঞ্চলটিকে এক অভূতপূর্ব মানবিক সংকটের মধ্যে ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গাজায় যুদ্ধাবসানের পথ খুলে দিতে পারে। তবে হামাসের প্রধান শর্ত—“স্থায়ী যুদ্ধ সমাপ্তির নিশ্চয়তা”—পূরণ না হলে এ প্রক্রিয়া থমকে যেতে পারে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। সবকিছু নির্ভর করছে আসন্ন কয়েক দিনের কূটনৈতিক অগ্রগতির ওপর।