
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সংগঠনটি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার রাতে দেওয়া একটি দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত জানান এবং আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, অনিয়ম, সুবিধাবাদ এবং নেতৃত্বে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য রাখেন।
মূল অভিযোগসমূহ ও অভিজ্ঞতা
উমামা তাঁর পোস্টে অভিযোগ করেন,
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন আর মূল চেতনায় পরিচালিত হচ্ছে না; বরং একে ঘিরে গড়ে উঠেছে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, দলীয় প্রভাব ও ‘ভাই-ব্রাদার কোরামের’ রাজনীতি।
- জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাইলেও দলে ভেতর থেকে অনলাইন-অফলাইনে তাঁর ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হয়।
- আন্দোলনের ভেতরে ‘Smear campaign’, অর্থাৎ তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো ও প্রচারণা চালানো হয়, এমনকি ফেসবুক পেজ থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে পোস্টও দেওয়া হয়, যেখানে তাঁর অ্যাক্সেস থাকার কথা ছিল।
- অনেকে তাকে ‘কাজ করতে দিচ্ছে না’ বলে অপপ্রচার চালায়, অথচ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ ছিল অন্যদের হাতে।
নেতৃত্ব নির্বাচনের অভিযোগ
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রথম কাউন্সিল ও নতুন কমিটি নিয়েও তিনি অভিযোগ তোলেন।
- তিনি বলেন, কাউন্সিলের ভোটে অংশগ্রহণের পরিবেশ ছিল না; অধিকাংশ প্রকৃত কর্মীদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগই দেওয়া হয়নি।
- ভোটার তালিকা ছিল সংকুচিত, যেখানে একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাব স্পষ্ট ছিল।
- এমনকি একজন প্রার্থী, যিনি নির্বাচনে অংশই নেননি, তিনিও পরবর্তীতে ‘মেম্বার’ হয়ে যান—যা দলীয় দখল ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ।
ব্যক্তিগত হতাশা ও রাজনৈতিক পিছু হটা
উমামা জানান,
- তিনি রাজনীতি থেকে কোনো সুবিধা নিতে চাননি, বরং সত্যিকার অর্থে অভ্যুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছিলেন।
- তবে বাস্তবতা তাকে হতাশ করেছে—একটি পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে যুক্ত হয়ে প্রতারণা ও স্বার্থান্ধ রাজনীতির শিকার হতে হয়েছে তাঁকে।
- তিনি বলেন, “আমি কাঁদা ছোড়াছুড়ি করতে আসিনি, এসেছিলাম সংস্কার করতে।”
ভবিষ্যৎ ভাবনা ও বার্তা
- উমামা লেখেন, এখন থেকে তিনি পড়াশোনা, বিজ্ঞান ও “Empowering Our Fighters” প্রকল্পে মনোযোগ দিতে চান।
- আন্দোলনের তরুণ কর্মীদের প্রতি তাঁর বার্তা—“পড়ার টেবিলে মনোযোগ দিন, কাজে মনোযোগ দিন।”
- শেষ পর্যন্ত তিনি এই প্ল্যাটফর্ম থেকে দেওয়া সমর্থন ও কাউন্সিলে প্রদত্ত ভোটও প্রত্যাহার করেন এবং বলেন, “আমি এই মোনাফেকদের কখনো ক্ষমা করব না।”
উমামা ফাতেমার পদত্যাগ ও বিস্ফোরক ভাষ্যে আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, গণতন্ত্রচর্চার অভাব এবং দলীয় প্রভাবের ছায়া স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এই ঘটনা ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
একটি বৃহৎ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সম্ভাবনাময় আন্দোলন কীভাবে ভেঙে পড়ে—তার বাস্তব উদাহরণ হয়ে রইল এই পদত্যাগপত্র।