
পেট্রল পাম্পে কাজ করতেও রাজি ছিলেন ডেপ
২০২২ সালের এপ্রিলে শুরু হয়েছিল জনি ডেপ ও অ্যাম্বার হার্ডের বহুল আলোচিত মানহানির মামলার শুনানি। প্রায় দুই মাস ধরে চলা এই মামলার প্রতিটি ধাপ সরাসরি সম্প্রচার হয় ইউটিউবে, আর সারা বিশ্বের চোখ তখন ছিল একটি সিনেমার পর্দা নয়, বরং বাস্তব আদালতের ডাকে।
সেই মামলা ও বিতর্কের তিন বছর পর, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতা, ভয়, লড়াই আর প্রত্যাবর্তন নিয়ে মুখ খুলেছেন জনি ডেপ।
বিতর্কের শুরু ও আইনি লড়াই
সবকিছুর শুরু ২০১৬ সালে, যখন সাবেক স্ত্রী অ্যাম্বার হার্ড জনি ডেপের বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ আনেন।
এরপর ২০১৮ সালে দ্য সান পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হার্ড জানান, তিনি জনির হাতে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন।
এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জনি মানহানির মামলা করেন, যার রায় আসে ২০২০ সালে। সেখানে আদালত জনির বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য বলে উল্লেখ করে, এবং এর ফলস্বরূপ তিনি বাদ পড়েন ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস’ ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে।
এরপর ২০২২ সালে, অ্যাম্বার ওয়াশিংটন পোস্টে এক কলামে নিজেকে ‘পারিবারিক নির্যাতনের প্রতীক’ দাবি করেন। এবার জনি ফের আইনি পদক্ষেপ নেন এবং মামলার শুনানি হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
জনির বক্তব্য: “আমি ভয় পাইনি”
সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জনি ডেপ বলেন,
“অনেকেই বলছিল, চুপ থাকো, সময়ের সঙ্গে সব মিটে যাবে। কিন্তু আমি জানতাম, সত্যটা না বললে সবাই ধরে নেবে আমি দোষী। আমার সন্তানদের সেই দাগ বয়ে বেড়াতে হতো।”
তিনি আরও বলেন,
“নেতিবাচক প্রচার, বানোয়াট খবর—সব সহ্য করেছি। তবুও লড়ে গেছি। এমনকি পেট্রল পাম্পেও যদি কাজ করতে হতো, আমি করতাম। কারণ সত্যটাই শেষ পর্যন্ত বাঁচায়।”
আদালতের রায়: ডেপের পক্ষে
মার্কিন আদালত মামলার রায়ে জানান,
- অ্যাম্বার হার্ডের অভিযোগ ছিল মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
- জনিকে দিতে বলা হয় ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ।
- আদালত স্পষ্ট করে যে, হার্ড জনিকে অপমান করে ব্যক্তিগত ও পেশাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
পুনরাগমন: আবার বড় পর্দায় ডেপ
চলমান আইনি জটিলতার পর অনেকটা সময় সিনেমা থেকে দূরে ছিলেন জনি ডেপ। অবশেষে তিনি ফিরছেন ‘ডে ড্রিংকার’ নামে নতুন একটি ছবিতে, যেখানে তাঁর বিপরীতে থাকছেন পেনেলোপি ক্রুজ।
ডেপ জানান,
“আমার জীবনে কোনো আক্ষেপ নেই। যা হওয়ার, তা হয়ে গেছে। সেসব ভেবে আর লাভ নেই। সামনে এগোতে হবে।”
সিনেমাটি ২০২৬ সালে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।
জনি ডেপের এই পুরো যাত্রা কেবল একজন অভিনেতার পুনরাবির্ভাবের নয়—এটা সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। ব্যক্তিগত জীবনের ধাক্কা, পেশাগত ব্যর্থতা, অপমান, এবং সামাজিক বিচারের মুখোমুখি হয়েও যে মানুষ উঠে দাঁড়াতে পারেন, ডেপ সেই অনুপ্রেরণার নাম।