July 16, 2025
আর চুপ থাকার মতো পরিস্থিতি নেই

আর চুপ থাকার মতো পরিস্থিতি নেই

জুন ২০, ২০২৫

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শপথ না নিয়েও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের ‘মেয়রের দায়িত্ব পালন’ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিষয়টি শুধু আইনগত প্রশ্নই নয়, বরং এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক শিষ্টাচার, দায়িত্ববোধ এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক শৃঙ্খলার প্রশ্ন।

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বক্তব্যে স্পষ্ট—এই ইস্যুটি অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, এখন আর চুপ থাকার সুযোগ নেই। অর্থাৎ, পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে আইনি ও রাজনৈতিক সমাধান জরুরি হয়ে উঠেছে। তিনি উল্লেখ করেন, এ ঘটনার কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যদিও নাগরিক সেবা বজায় রাখতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই বক্তব্যে সরকারের দ্বৈত অবস্থানও স্পষ্ট—একদিকে তারা রাজনৈতিক সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ রাখতে চায়, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলাও রক্ষা করতে চায়।

আইনি ও প্রক্রিয়াগত দৃষ্টিকোণ

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইশরাক হোসেন আইন অনুযায়ী মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের অধিকার রাখেন না, যেহেতু তিনি শপথ গ্রহণ করেননি। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটি অত্যন্ত ‘লজ্জাজনক’ ও ‘সমীচীন নয়’। তিনি অবশ্য এক বিকল্প পথের কথা বলেন—সব পক্ষ একমত হলে ইশরাককে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

এই বিশ্লেষণ দেখায়, সমাধানের পথ পুরোপুরি বন্ধ নয়, তবে তা আইনি কাঠামোর মধ্যে এবং রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সম্ভব।

রাজনৈতিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বিএনপির আচরণও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের উচিত ছিল, নিজেদের নেতার এমন বিতর্কিত উদ্যোগে সজাগ থাকা এবং দলীয়ভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া। কারণ এ ধরনের নজির ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত মানদণ্ড তৈরি করতে পারে। একইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টিকে সময়মতো সুষ্ঠুভাবে সমাধানের উদ্যোগ না নেওয়া, পরিস্থিতি অবনতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

প্রশাসনিক অচলাবস্থা ও নাগরিক ভোগান্তি

এই অচলাবস্থা সর্বশেষ গিয়ে ঠেকেছে নাগরিকদের উপর—যাদের সেবা নিশ্চিত করার জন্যই একটি সিটি করপোরেশন কাজ করে। মেয়রের পদে এই অনিশ্চয়তা ঢাকাবাসীর দৈনন্দিন নাগরিক সেবায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, এবং এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা প্রশ্নের মুখে পড়ছে।

ইশরাক হোসেনের ‘মেয়র’ হিসেবে দায়িত্ব পালন এক গভীর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। এটি একদিকে আইনের ব্যত্যয়, অন্যদিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো—সরকার, বিএনপি ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে একটি স্পষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ, যা আইনি কাঠামো মেনে এবং রাজনৈতিক সৌহার্দ্য বজায় রেখেই হওয়া উচিত।

Leave a Reply