
ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক ষড়যন্ত্রকারীদের কফিনে শেষ পেরেক: প্রেস সচিব
চার দিনের সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাজ্যে এই সফর কেবল রাষ্ট্রীয় সৌজন্য নয়, বরং তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে বহুমাত্রিক বার্তা বহন করেছে। সফরের শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সফরের গুরুত্বকে নতুনভাবে উন্মোচিত করেছে।
ঐতিহাসিক বৈঠক: ‘ষড়যন্ত্রকারীদের কফিনে শেষ পেরেক’
শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ছিল ‘ঐতিহাসিক’। তার ভাষায়, এটি “ষড়যন্ত্রকারীদের কফিনে শেষ পেরেক” এবং দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য একটি “গেম ওভার মুহূর্ত”।
এই বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর প্রতীকী তাৎপর্য বহন করছে। ক্ষমতা হস্তান্তরের আলোচনার গতি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি এটি বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য ঐকমত্য গঠনের সূচনা বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও কূটনৈতিক সংযোগ
ড. ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ গ্রহণ। রাজা চার্লসের সঙ্গে ৩০ মিনিটব্যাপী একান্ত বৈঠক এবং এই সম্মাননা—উভয়ই বাংলাদেশের চলমান রূপান্তরকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত বহন করে বলে প্রেস সচিব দাবি করেন। তিনি এটিকে “জুলাই বিপ্লব” ও ২০২৪ সালের পর বাংলাদেশের “যুগান্তকারী পরিবর্তনের স্বীকৃতি” হিসেবে বর্ণনা করেন।
দুর্নীতি বিরোধী বার্তা: জব্দ হওয়া ৩২০ সম্পত্তি
সফরের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক ছিল যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ। প্রেস সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শীর্ষ এক সহযোগীর ৩২০টি বিদেশি সম্পত্তি জব্দ করেছে এনসিএ, যার মূল্য প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার। এনসিএ এটিকে তাদের ইতিহাসে একক বৃহত্তম সম্পত্তি জব্দ অভিযান হিসেবে উল্লেখ করেছে।
শফিকুল আলম এ ঘটনাকে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সম্পদ পুনরুদ্ধার কর্মসূচির বড় সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “এটি দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের জন্য একটি কড়া বার্তা।”
প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা, মন্ত্রী ও তদন্তকারী সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পদ পুনরুদ্ধারে গভীরতর সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, “আশা করি, আমরা এই অভিজ্ঞতা বিশ্বব্যাপী কাজে লাগাতে পারব।”
রোহিঙ্গা সংকটে সম্ভাব্য অগ্রগতি
শফিকুল আলম সফরের আরেকটি আশাব্যঞ্জক দিক হিসেবে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা ও সম্ভাব্য অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি, তবু এটি ভবিষ্যতে একটি কূটনৈতিক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ড. ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফর ছিল একাধারে প্রতীকী, কৌশলগত ও প্রভাবশালী। এই সফরের মধ্য দিয়ে তিনি দেশের রাজনৈতিক সমঝোতার পথ প্রশস্ত করেছেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন এবং দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে নতুন আস্থা ও গতির সঞ্চার ঘটিয়েছেন। প্রেস সচিবের মন্তব্যগুলো এই সফরের বহুমাত্রিক সফলতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।