
ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় ইরানের ছয় শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীসহ নিহত বহু, ‘অপারেশন রাইসিং লায়ন’ ঘিরে উত্তেজনা
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ইসরায়েলের চালানো একাধিক প্রাণঘাতী হামলায় ইরানের ছয়জন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা, ইরানি বার্তা সংস্থা তাসনিম এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
নিহত পরমাণু বিজ্ঞানীরা:
১. আব্দুল্লাহ মিনৌচেহর
২. আহমাদ রেজা জলফাঘারি
৩. সায়েদ আমির হোসেন ফাকহি
৪. মোতলাবিজাদে
৫. ফারেদুন আব্বাসি
৬. মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি
নিহতদের মধ্যে ফারেদুন আব্বাসি ছিলেন ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার (AEOI) সাবেক প্রধান। তিনি ২৫ বছর ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন এবং ২০১০ সালে একবার হত্যাচেষ্টায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।
অপর বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি ছিলেন ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট। বাকি বিজ্ঞানীদের ব্যাপারে এখনও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ পায়নি।
‘অপারেশন রাইসিং লায়ন’ – ইসরায়েলের সামরিক অভিযান
বিবিসি ও টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে শুরু হওয়া এই অভিযানকে ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইসিং লায়ন’ নাম দিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করতেই এই অভিযান চালানো হয়।
এক অজ্ঞাত ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তার বরাতে জানানো হয়, “শত শত হামলা চালানো হয়েছে এবং অন্তত আটটি শহরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে।”
হামলার লক্ষ্যস্থল:
নিম্নে ইসরায়েলের হামলার শিকার হওয়া শহর ও স্থাপনাগুলোর তালিকা—
- তেহরান ও আশপাশের সামরিক ঘাঁটি
- নাতানজ (ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র)
- তাবরিজ (পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ও সামরিক ঘাঁটি)
- ইস্পাহান
- আরাক
- কেরমানশাহ
তেহরানজুড়ে ৬–৯টি ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
এমনকি আবাসিক ভবনেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ইরানের প্রতিক্রিয়া
তেহরান জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের “কঠোর ও উপযুক্ত জবাব” দেওয়া হবে। এ হামলাকে সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তায় চরম আঘাত হিসেবে বিবেচনা করছে ইরান।
এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় যুদ্ধের পূর্বাভাস হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল। ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব এখন আর গোপন নয়; বরং এক প্রকাশ্য ও ভয়াবহ সংঘর্ষের পথে এগোচ্ছে।
বিশেষ করে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপ পারমাণবিক উত্তেজনাকে আরও উসকে দিতে পারে।
ইসরায়েলের “অপারেশন রাইসিং লায়ন” এবং এর ফলে ইরানের ছয় পরমাণু বিজ্ঞানীর নিহত হওয়া শুধু তেহরান নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই গভীর উদ্বেগের বিষয়।
পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে ইরানের জবাব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা চেষ্টার ওপর। তবে এটা স্পষ্ট— মধ্যপ্রাচ্য এখন নতুন এক অস্থিতিশীলতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।