
১০৬ কোটি ডলার পাচ্ছে ঢাকা, প্রতিরক্ষা চুক্তিতেও সম্মত
জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক: অর্থনৈতিক সহায়তা ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের নবদিগন্ত
১. ঋণ ও অনুদান সহায়তা
জাপান বাংলাদেশকে মোট ১০৬ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলার: ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোন, যা অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য।
- ৬৪ কোটি ১০ লাখ ডলার: রেল প্রকল্পে ঋণ, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রুটে ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন উন্নয়নের জন্য।
- ৪২ লাখ ডলার: স্কলারশিপ অনুদান।
এই সহায়তা বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
২. প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
জাপান প্রথমবারের মতো অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স (OSA) প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ৫টি টহল নৌকা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
৩. দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন
জাপানি প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক উত্তরণ ও ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। উভয় নেতা মুক্ত ও মুক্তমনা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের পক্ষে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।
৪. ৬টি সমঝোতা স্মারক (MoU)
বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও সহযোগিতার লক্ষ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়:
- গ্যাস প্রিপেইড মিটার প্রকল্প: ৮ লাখ মিটার স্থাপনের পরিকল্পনা (খরচ: প্রায় ৯০০ কোটি টাকা), যদিও বিতরণ কোম্পানির আপত্তি রয়েছে।
- অনোডা ইনক: গ্যাস মিটারের অ্যাসেম্বলি ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা স্থাপন।
- নেক্সিস কোম্পানি: গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ কারখানা।
- গ্লাফিট ও অন্যান্য: ব্যাটারিচালিত বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল কারখানা।
- কিপার কোর লিমিটেড: ২ কোটি ডলারের তথ্য নিরাপত্তা প্রকল্প।
- জাইকা ও বিডা: একীভূত সিঙ্গেল উইন্ডো প্ল্যাটফর্ম উন্নয়ন।
৫. ইপিএ (Economic Partnership Agreement)
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরিত হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
৬. প্রবাসীদের গুরুত্ব
ড. ইউনূস প্রবাসীদের অবদানকে স্বীকার করে বলেছেন, অর্থনৈতিক সংকটে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সই বাংলাদেশকে টিকিয়ে রেখেছে। তিনি নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রবাসীদের ও জাপানের সহযোগিতা কামনা করেন।
জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক বর্তমানে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতার একটি নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে। জাপানের এই বিশাল অঙ্কের ঋণ এবং অনুদান বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে রেলপথ উন্নয়ন, স্কলারশিপ, এবং ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবহন খাত ও মানবসম্পদ উন্নয়ন গতি পাবে।
তবে গ্যাস মিটার প্রকল্পে বিতরণ কোম্পানির আপত্তি ভবিষ্যতে বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে—এটা নিয়ে স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিগত যাচাই জরুরি। এছাড়া নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা এই অঞ্চলে জাপানের ভূরাজনৈতিক সক্রিয়তার একটি ইঙ্গিত।
ড. ইউনূসের সফরটি মূলত দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্তরে সুদৃঢ় করার সুযোগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।