
পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে যুদ্ধবিমান হারানোর কথা স্বীকার করল ভারত
চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘটে যাওয়া চারদিনের সংঘর্ষে কয়েকটি যুদ্ধবিমান হারানোর কথা প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (CDS) জেনারেল অনিল চৌহান। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ‘শাংরি-লা ডায়ালগ’-এ ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই স্বীকারোক্তি দেন।
যুদ্ধবিমান ক্ষয়ক্ষতির স্বীকারোক্তি ও ব্যাখ্যা
সাক্ষাৎকারে জেনারেল চৌহান বলেন, যুদ্ধবিমান হারানোর ঘটনাটি যতটা না সংখ্যার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—সেগুলো কীভাবে ভূপাতিত হলো। তিনি পাকিস্তানের ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি সরাসরি অস্বীকার করেন, তবে ভারত কতটি বিমান হারিয়েছে তা জানাননি।
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের কৌশলগত ভুল চিহ্নিত করেছি এবং তা সংশোধন করে দ্রুতই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। দুই দিনের মাথায় পুনরায় আক্রমণ চালিয়ে আমরা দূর পাল্লার লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছি।”
পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা ও আন্তর্জাতিক ভূমিকা
এ সংঘর্ষকে ঘিরে পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি হলেও, জেনারেল চৌহান স্পষ্টভাবে বলেন, “এই চারদিনের সংঘর্ষ কখনোই পারমাণবিক যুদ্ধের ধারেকাছেও যায়নি।” তিনি জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সবসময় একটি যোগাযোগ চ্যানেল খোলা ছিল।
যদিও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, পারমাণবিক যুদ্ধ এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা করেছে, তবে জেনারেল চৌহান এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
চীন-পাকিস্তান প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রসঙ্গে
জেনারেল চৌহান পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে বলেন, “চীনের কাছ থেকে যে প্রযুক্তিগত সহায়তা তারা পেয়েছে, তার বাস্তব কোনো কার্যকারিতা ছিল না। চীনের সরবরাহকৃত অস্ত্র ও প্রযুক্তি সঠিকভাবে কাজ করেনি।”
সংঘর্ষের পটভূমি ও পাকিস্তানের দাবি
সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে চলতি বছরের ৭ মে কাশ্মীরে ভয়াবহ এক হামলার পর, যেখানে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারত শুরু করে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান।
পাকিস্তান দাবি করে, এই অভিযানের জবাবে তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে তিনটি ফরাসি রাফাল, একটি রাশিয়ান মিগ-২৯, একটি এসইউ-৩০ এবং একটি আরও অজ্ঞাত যুদ্ধবিমান।
ভবিষ্যতের হুমকি ও সতর্ক বার্তা
বর্তমানে সংঘর্ষ বন্ধ থাকলেও, জেনারেল চৌহান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি পাকিস্তানের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। তিনি জানান, ভারত তার “রেড লাইন” স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে।
এই সংঘর্ষকে গত ৫০ বছরের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক সংঘর্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা ছিল, উভয় পক্ষের কৌশলগত সংযম এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক যোগাযোগ পরিস্থিতিকে বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছে। জেনারেল চৌহানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ভারত এখন শুধু প্রতিক্রিয়াশীল নয়, কৌশলগতভাবে প্রস্তুত এবং আগাম পদক্ষেপ গ্রহণে সচেষ্ট।