
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে সরকার ও বিএনপি
আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে অবস্থান অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি আশাবাদী—সরকার এই অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে। এ লক্ষ্যে এক মাস সময় দেবে বিএনপি। এই সময়ে তারা নির্বাচন ইস্যুতে মাঠের কর্মসূচি স্থগিত রাখবে। তবে সরকার মনোভাব না বদলালে, জুলাই থেকে আবারো আন্দোলনে নামবে দলটি।
জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি স্পষ্ট হবে
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, জুলাই-আগস্টে নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতি আরও পরিষ্কার হয়ে উঠবে। ঈদুল আজহা (৭ জুন) পর্যন্ত রাজনৈতিক মাঠ কিছুটা শিথিল থাকলেও, ঈদের পর থেকেই বিএনপির কর্মসূচি আবার শুরু হবে বলে জানা গেছে।
৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে কর্মসূচি
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের বর্ষপূর্তি। এই উপলক্ষে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন পৃথক কর্মসূচি নেবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে ঠিক কী কর্মসূচি হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বিএনপির কড়া অবস্থান: নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে হবে
তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি শুরু থেকেই জোরালোভাবে বলে আসছে—নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে। দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, এই অবস্থান থেকে পিছু হটলে দলীয় দুর্বলতা প্রকাশ পাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করব। আমরা আরও কিছু সময় অপেক্ষা করব, যাতে সরকারের বিবেচনাবোধ জাগে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান: নির্বাচন জুনের মধ্যে
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগের মতোই জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে রয়েছেন। তিনি টোকিওতে অনুষ্ঠিত নিক্কেই ফোরামের এক আলোচনায় বলেন, “শুধু একটি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। অন্যান্য দল এই সময়সীমা চায় না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, অধ্যাপক ইউনূস শুধু নির্বাচন নয়, ন্যূনতম রাজনৈতিক সংস্কার ও জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই সরকার এবং বিএনপির অবস্থান অনেকটাই মেরুকৃত হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, “বিএনপি ডিসেম্বরের দাবিতে অনড় থাকবে, কারণ অবস্থান থেকে সরে এলে দলটি দুর্বলতা দেখাবে। অন্যদিকে অধ্যাপক ইউনূস সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন দিলে, তিনি নিজের অবস্থানে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবেন।”
নির্বাচনের সময়সীমা ও কাঠামো নিয়ে সরকার ও বিএনপি একেবারে বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। জুলাই-আগস্ট মাসে এ সংকটের সিদ্ধান্তমূলক দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে দেখা যাবে, ৫ আগস্টের বর্ষপূর্তি ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি ও কর্মপরিকল্পনা। এই সময়কালই হয়তো নির্ধারণ করবে—বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে: সংঘর্ষ না সমঝোতা।