July 8, 2025
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস

জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস

মে ২৭, ২০২৫

বাংলাদেশের বিচার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মুহূর্তের সাক্ষী হল দেশ – মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি প্রথমবারের মতো আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেলেন। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে তাকে খালাস দেন আপিল বিভাগ।

২০২৫ সালের ২৭ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই রায় দেন। এর মাধ্যমে আজহারুল ইসলামের মুক্তির পথে আর কোনো আইনি বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

প্রেক্ষাপট ও মামলার ইতিহাস

এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে রংপুর অঞ্চলে সংঘটিত গণহত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ ছিল—তিনি ১২৫৬ জন মানুষকে হত্যা বা গণহত্যায় যুক্ত ছিলেন, ১৭ জনকে অপহরণ করেন, একজনকে ধর্ষণ করেন এবং শত শত বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনে অংশ নেন।

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে আপিল বিভাগে আবেদন করা হলে ২০১৯ সালে সে রায় বহাল রাখা হয়। এরপর আজহারুল রিভিউ আবেদন করেন, যা আদালত আমলে নিয়ে মূল মামলায় আপিল করার সুযোগ দেন—এটিও এই ধরনের মামলায় প্রথম।

রায়ের তাৎপর্য ও আইনি বিশ্লেষণ

এই রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় কয়েকটি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ:

  1. ন্যায়বিচারের মানদণ্ড:
    • এই রায় দেখায় যে, আন্তর্জাতিক অপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগের বিচার হলেও আপিল বিভাগ প্রমাণের মান, সাক্ষ্য এবং আইনগত পদ্ধতির নির্ভুলতা বিবেচনায় রাখে।
  2. আইনি প্রক্রিয়ার নতুন দিগন্ত:
    • মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে রিভিউ শুনানির মাধ্যমে মূল মামলায় আপিল করার সুযোগ দেওয়া বিচার বিভাগের নমনীয়তা ও গভীরতার প্রমাণ। এটি ভবিষ্যতের মামলায় নজির হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
  3. রাজনৈতিক বিতর্ক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া:
    • জামায়াতে ইসলামীর নেতার খালাস পাওয়ার বিষয়টি দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে আলোচিত হবে। পক্ষ ও বিরোধী উভয় মহলেই এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।
  4. আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট:
    • মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়েছে। তবে এমন রায় দেখায়, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দেশ কোনো পক্ষপাত দেখায় না এবং আইনি প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দেয়।

এই রায় বাংলাদেশের বিচার ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। একদিকে এটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত, অন্যদিকে এটি একটি স্পষ্ট বার্তা – মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো বিষয়েও আদালত সর্বোচ্চ সতর্কতা ও বিচারিক মান বজায় রাখে। যদিও এই রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্ক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে, তবে আইনের চোখে প্রতিটি নাগরিকের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করাই শেষ কথা।

Leave a Reply