
আদনান আল রাজীবের ‘আলী’র সাফল্যে কানে বাংলাদেশের ইতিহাস
নির্মাতা আদনান আল রাজীবের পরিচালনায় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আলী’ ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে জuryদের পক্ষ থেকে ‘স্পেশাল মেনশন’ পুরস্কার পেয়েছে। এটি বাংলাদেশের পক্ষে এই প্রতিযোগিতা বিভাগে পাওয়া প্রথম স্বীকৃতি।
বাংলাদেশের জন্য গর্বের মুহূর্ত
রাজীব বলেন,
“এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য, এবং বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় একটি অর্জন। দেশের মানুষ এখন যে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এই সাফল্য তাদের মনে এক টুকরো স্বস্তি ও আশার আলো জ্বালাবে।”
তিনি যোগ করেন, কানে নিজের নামের সঙ্গে দেশের নাম উচ্চারিত হওয়া ছিল স্বপ্নের চেয়েও বড় অনুভূতি।
পুরস্কার ঘোষণার মুহূর্তে তিনি ছিলেন স্তব্ধ, বিস্মিত, আবেগাক্রান্ত। করতালিতে ভরা হলরুমের সেই দৃশ্য তাঁকে আজীবনের মতো ছুঁয়ে গেছে।
বিয়ের পরেই ভাগ্য খুলেছে?
[হাসতে হাসতে] রাজীব বলেন,“মনে হচ্ছে, আমার বউ (অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী) আমার জন্য লাকি চার্ম! বিয়ের পরই কান-সফলতা এসেছে।”
‘আলী’ কার গল্প বলে?
‘আলী’ এক ছোট ছেলের গল্প, যার জীবনে আছে
- মানবিকতা,
- হারিয়ে ফেলা ও
- ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
রাজীবের ভাষায়,
“গল্পটি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত, আর আমি বিশ্বাস করি যত ব্যক্তিগত একটি গল্প হয়, ততই তা সর্বজনীন হয়ে ওঠে।”
চ্যালেঞ্জ ও সাফল্যের গল্প
- নতুন শিল্পীদের নিয়ে কাজ করাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, তবে তারাই চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছে।
- বাজেট ও লোকেশন ম্যানেজমেন্ট ছিল সীমিত, কিন্তু দলীয় চেষ্টায় তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
কাদের জন্য এই সিনেমা?
রাজীব বলেন,
“এই সিনেমাটি আমি তাঁদের উৎসর্গ করেছি, যারা অনেক কিছু বলতে চায় কিন্তু পারেন না নানা চাপের কারণে। আমি চাই, এই গল্প তাদের মধ্যে সাহস জাগিয়ে তুলুক।”
আন্তর্জাতিক প্রযোজনা ও সহায়তা
তিনি উল্লেখ করেন, ফিলিপাইনের বন্ধুদের সহায়তা ছাড়া ‘আলী’ নির্মাণ সম্ভব ছিল না। বিশেষ করে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ বাংলাদেশে সীমিত হওয়ায় যৌথভাবে কাজটি সম্পন্ন করেছেন।
ভবিষ্যতের ভাবনা: পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আন্তর্জাতিক স্বপ্ন
- পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
- স্ক্রিপ্টের কাজ চলছে, তবে তাড়াহুড়া নয়— সঠিক গল্প নিয়ে প্রস্তুত হয়ে বড় পর্দায় আসতে চান।
- তাঁর মতে, “স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা শুধু প্রস্তুতির মাধ্যম নয়, বরং তা নিজেই এক শক্তিশালী মাধ্যম। তরুণদের আরও এগিয়ে আসা উচিত।”
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক সম্ভাবনা
রাজীব মনে করেন,“আমরা এখন এক ধরনের চলচ্চিত্র রেনেসাঁর মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নির্মাতারা সাহসী, আন্তরিক ও বৈচিত্র্যময়। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হতে এখন শুধু দরকার ধারাবাহিকভাবে ভালো কাজ।”
এই সাফল্য কেবল একজন নির্মাতার অর্জন নয়, এটি বাংলাদেশের সিনেমার জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা। ‘আলী’ হয়ে উঠেছে সেই কণ্ঠস্বর, যা নীরবতা ভেঙে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগায়।