
সচিবালয়ে বিক্ষোভ: সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া বাতিলের দাবিতে আজ সোমবার রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা দ্রুত সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর সামনে ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভের বিবরণ
- সময় ও স্থান:
বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। - নেতৃত্ব:
মিছিলে নেতৃত্ব দেন পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবির ও কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম। - স্লোগান:
বিক্ষোভকারীরা ‘অবৈধ কালো আইন মানব না’, ‘আপস না সংগ্রাম’, ‘লেগেছে রে রক্তে আগুন লেগেছে’—ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত করে তোলে সচিবালয়। - অংশগ্রহণ:
বিভিন্ন দপ্তর থেকে কর্মচারীরা নেমে এসে মিছিলে যোগ দেন, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। - আন্দোলনের হুঁশিয়ারি:
আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন—দাবি না মানলে সচিবালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
পটভূমি ও দাবির কারণ
- অধ্যাদেশের অনুমোদন:
গত বৃহস্পতিবার সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। কর্মচারীরা একে “নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন” বলে অভিহিত করেছেন। - গেজেট প্রকাশ:
গতকাল (রবিবার) সরকার এই অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করে জানায়—“ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে।”
বিতর্কিত ধারা: ৩৭ক ও বিশেষ বিধান
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-তে নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে ধারা ৩৭ক। এতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য চারটি অপরাধ এবং তিন ধরনের শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে:
● অপরাধসমূহ:
- এমন কোনো কাজ করা, যা অন্য কর্মচারীর শৃঙ্খলা বা আনুগত্যে ব্যাঘাত ঘটায়।
- সংগঠিত বা ব্যক্তিগতভাবে কাজে অনুপস্থিত থাকা (ছুটি বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া)।
- অন্যকে কাজে না আসতে বা দায়িত্ব পালন না করতে উসকানি দেওয়া।
- অন্যকে প্ররোচিত করা কর্মবিরতিতে অংশ নিতে।
● শাস্তির ধরন:
- বরখাস্ত
- অব্যাহতি
- পদাবনতি বা বেতন কর্তন
সরকারি উদ্যোগ
চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গতকাল একটি স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যার উদ্দেশ্য হলো—সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া যাচাই করে সুপারিশ প্রদান।
সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা আনার নামে ঘোষিত এই অধ্যাদেশ সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। সচিবালয়ের বিক্ষোভে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজে কিনা, নাকি বিক্ষোভ আরও বিস্তৃত আকার ধারণ করে।