
মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা: সেনাপ্রধান
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও অফিসার্স অ্যাড্রেস সভায় তাঁর বিভিন্ন মন্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
১. মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান
সেনাপ্রধান স্পষ্টভাবে বলেছেন, মব ভায়োলেন্সের (গণপিটুনি বা জনতার সহিংসতা) বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি স্পষ্টতই একটি বার্তা যে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় সেনাবাহিনী সক্রিয় এবং সহিংস আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
২. নির্বাচন ও রাজনৈতিক সরকারে ক্ষমতা হস্তান্তর
তিনি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়, যা দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ।
৩. নিরপেক্ষতা ও শৃঙ্খলার প্রতি গুরুত্ব
সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্যে বারবার সেনাসদস্যদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে নির্বাচনী সময়ে সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করার আহ্বান গুরুত্বপূর্ণ, যা আগত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে।
৪. রোহিঙ্গা সংকট ও মানবিক করিডোর
রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে মানবিক করিডোর খোলার বিষয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—এই সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই নেওয়া উচিত। এর মাধ্যমে তিনি সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে দূরে রাখার অবস্থান তুলে ধরেছেন।
৫. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও জাতিসংঘের প্রতিবেদন
জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করার বিষয়ে সেনাপ্রধান অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের অভাবের ইঙ্গিত দেন।
৬. অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা
সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে বলে সেনাপ্রধান জানিয়েছেন। এটি স্পষ্ট করে যে, সামরিক বাহিনী প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সরকারের পাশে রয়েছে, তবে ক্ষমতা দখলের কোনো আগ্রহ নেই।
৭. বাহিনীর ভাবমূর্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতি
সেনাপ্রধান বলেন, কিছু মহল তাঁকে ও বাহিনীকে ‘অন্যায্যভাবে’ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। এই বক্তব্য বাহিনীর ভাবমূর্তি রক্ষায় তাঁর দৃঢ় অবস্থান ও বাহিনীর প্রতি আনুগত্যের বার্তা দেয়।
সেনাপ্রধানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়, তিনি একটি পেশাদার, নিরপেক্ষ এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ সেনাবাহিনীর পক্ষপাতী। মব ভায়োলেন্স, নির্বাচনী নিরপেক্ষতা, মানবিক ইস্যু এবং রাজনৈতিক সরকার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান—এই চারটি দিক তাঁর বক্তব্যে গুরুত্ব পেয়েছে। তাঁর এই বার্তাগুলো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পরিবেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।