July 8, 2025
জামায়াতের পর বিএনপির সঙ্গেও বিবাদে এনসিপি

জামায়াতের পর বিএনপির সঙ্গেও বিবাদে এনসিপি

মে ২২, ২০২৫

নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নানা প্রশ্নে রাজনৈতিক মেরুকরণে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় উঠে এসেছে। জামায়াতে ইসলামীর একাত্তর সংশ্লিষ্ট অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ এনসিপিকে রাজনৈতিকভাবে জটিল অবস্থানে ফেলেছে।

বিএনপির সঙ্গে বিরোধ: ইশরাক ইস্যু ও ক্ষমতা কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। গেজেট প্রকাশের পরও শপথ না নেওয়া নিয়ে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে বিএনপির আন্দোলন শুরু হয়, যার প্রতি এনসিপি বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানায়।

এনসিপি অভিযোগ করে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো মূলত বিএনপির নিয়ন্ত্রণে, যদিও সরকারে এনসিপির উপদেষ্টারা আছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে এনসিপির দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে।

এনসিপির মতে, বিচার বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয়, প্রশাসন—সবখানেই বিএনপিপন্থিদের প্রভাব স্পষ্ট। তাদের ভাষায়, “ক্ষমতা ভাগ হলেও প্রভাব একচেটিয়া”। এই অবস্থান স্পষ্ট করে এনসিপি নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও নিরপেক্ষতা দাবি করে আন্দোলনে নামে।

জামায়াত ও ডানপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি

‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের’ দাবিতে যমুনার সামনে আন্দোলনে জামায়াত-শিবির, হেফাজত, ইসলামী আন্দোলনের সমর্থন পেলেও একাত্তরের প্রশ্নে সাফ অবস্থান নেওয়ায় এনসিপির সঙ্গে ডানপন্থি দলগুলোর সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে।

এনসিপির উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লিখেন:

“একাত্তরের প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে।”

এই বক্তব্য জামায়াতকে লক্ষ্য করে বলার বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। এনসিপি পরে বিবৃতি দিয়ে জামায়াতকে একাত্তরের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানায়।


ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এনসিপির চ্যালেঞ্জ

একদিকে বিএনপি, অন্যদিকে ডানপন্থি দলগুলোর বিরূপতা—দুই দিক থেকেই চাপে রয়েছে এনসিপি। এই পরিস্থিতিতে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও জনসমর্থনের দিকটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

দলের ভেতরে মতবিরোধও স্পষ্ট। উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্য নিয়ে নেতৃত্বে দ্বিধা দেখা দিয়েছে। হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম বিরোধে না যেতে চাইলেও মাহফুজ ও নাসীরুদ্দীনের মতো নেতারা কড়া অবস্থানে রয়েছেন।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম দাবি করেন:

“আমরা কারও সঙ্গে বিরোধে নেই, বরং ঐক্যের রাজনীতি করতে চাই। মতভেদ থাকলেও দলে বিভেদ নেই।”

নবগঠিত এনসিপি বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে তাকে স্পষ্ট আদর্শিক অবস্থান, সুসংহত কৌশল এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে পথ হাঁটতে হবে। বিএনপি ও জামায়াত উভয়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় রাজনীতির মাঠে তারা এখন একা। এই একাকীত্ব যদি আদর্শিক দৃঢ়তায় রূপান্তর করা না যায়, তবে এনসিপি ভবিষ্যতে সাংগঠনিক দুর্বলতায় পড়তে পারে। তবে শক্তিশালী অবস্থান নিলে তারা একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতেও পারে।

Leave a Reply