July 7, 2025
কাকরাইলের সমাবেশে জবির সাবেক শিক্ষার্থীরাও, ক্যাম্পাস থেকে আসছে বাস

কাকরাইলের সমাবেশে জবির সাবেক শিক্ষার্থীরাও, ক্যাম্পাস থেকে আসছে বাস

মে ১৬, ২০২৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলন, যেখানে একদিকে রয়েছে দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার অভিযোগ, অন্যদিকে রয়েছে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংলাপহীনতা ও কঠোর প্রতিক্রিয়া। নিচে এই আন্দোলনের পটভূমি, বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:

আন্দোলনের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে একাধিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  1. ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি।
  2. পূর্ণাঙ্গ বাজেট বরাদ্দ।
  3. দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন।
  4. শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার তদন্ত ও বিচার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, আবাসন সংকট, এবং পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যা এখন সমন্বিত আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।

বর্তমান আন্দোলনের চিত্র

২০২৫ সালের মে মাসে এই আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে টানা কয়েকদিন ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি, পদযাত্রা এবং গণঅনশনের মাধ্যমে তাদের দাবি জানিয়ে আসছেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক হলো:

  • গণঅনশন কর্মসূচি: জুমার নামাজের পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনশন শুরু করেছেন।
  • সাবেক শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ: Alumni কমিটি ও পুরনো শিক্ষার্থীরা খাবার ও সহায়তা দিয়ে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
  • বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসে অংশগ্রহণ: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতিদিন বাসে শিক্ষার্থীরা কাকরাইলে সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।
  • পুলিশি হামলা ও দমন-পীড়ন: কাকরাইলে পদযাত্রার সময় শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও গরম পানি নিক্ষেপ করা হয়েছে, যা সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন তোলে।

অভ্যন্তরীণ সংকট ও প্রশাসনিক অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করা হলেও এখনও কোনো কার্যকর সমাধান আসেনি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত হচ্ছে না—এটা প্রশাসনিক সদিচ্ছার অভাবের ইঙ্গিত দেয়।

গণতান্ত্রিক আন্দোলন বনাম রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ দাবি ও প্রতিবাদ সংবিধানস্বীকৃত অধিকার। তবে আন্দোলনে পুলিশি হস্তক্ষেপ, লাঠিচার্জ এবং দমন-পীড়নের চিত্র উদ্বেগজনক। বিশেষ করে সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও হুমকি তৈরি করে।

সমাজ-রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

এই আন্দোলন কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ দাবি নয়; এটি দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের বৈষম্য, নগরভিত্তিক কেন্দ্রীকরণ, এবং বাজেট ঘাটতির প্রতিফলন। দাবিগুলো পূরণ না হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে পারে, যা জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষাক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।

পরামর্শ ও করণীয়

  1. সংলাপ ও সমঝোতার উদ্যোগ: সরকারকে দ্রুত কার্যকর আলোচনা করে বাস্তবসম্মত সমাধান দিতে হবে।
  2. সহিংসতা বন্ধ: পুলিশি দমন বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
  3. স্বচ্ছ তদন্ত: হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
  4. দাবি পূরণের রোডম্যাপ: সময়সীমা নির্ধারণ করে দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

এই আন্দোলন নতুন প্রজন্মের গণতান্ত্রিক চেতনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলেও, রাষ্ট্রের দায়িত্ব তা বুঝে গ্রহণযোগ্য ও মানবিক সমাধান দেওয়া—যা শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধান করবে না, বরং গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনবে।

Leave a Reply