
ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক মেরূকরণ দৃশ্যপটে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ড ঘিরে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে ছাত্রদল ও বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো। অন্যদিকে, কিছু সংগঠন প্রশাসনের পক্ষ নিয়েছে, ফলে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ছাত্রদলের প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচি
- সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর মঙ্গলবার মধ্যরাতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঢামেকে জড়ো হয়ে মিছিল করে উপাচার্যের বাসভবনে যায়।
- সেখানে উপাচার্য বের হয়ে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হন এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বলেন, “তোরা আমাকে মেরে ফেল।”
- পরে উপাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে সাম্য হত্যাস্থলে যান ছাত্রদল নেতারা।
- রাত ৩টায় আরেকটি মিছিল থেকে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি জানানো হয়।
- আজ বৃহস্পতিবার ছাত্রদল ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।
বামপন্থি সংগঠনের অবস্থান
- সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নও উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে।
- তাদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার ব্যর্থতায় বারবার হত্যাকাণ্ড ঘটছে।
বিভক্ত ছাত্ররাজনীতি ও ভিসিকে ঘিরে মতবিরোধ
- ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো উপাচার্যকে ‘জামায়াতপন্থি’ বলে দাবি করছে এবং মনে করছে, তাঁর নেতৃত্বে ডাকসু নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
- ইসলামী ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বি.ছা.আ) এবং বিডিএসসি ভিসির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের মতে, প্রশাসনে পরিবর্তন ডাকসু নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলবে।
অন্য সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
- শিবির ও বিডিএসসি প্রকাশ্যে ভিসির পক্ষে-বিপক্ষে কিছু বলেনি, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রদলের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
- জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা ভিসির সাহসী ভূমিকাকে প্রশংসা করেছেন।
- গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বিডিএসসি) ছয় দফা দাবি দিয়ে ভিসিকে স্মারকলিপি দিয়েছে।
রাজনৈতিক পটভূমি ও পূর্ববর্তী বিতর্ক
- উপাচার্যের নিয়োগের পর বিএনপি অভিযোগ করে, ঢাবিতে জামাতিকরণ চলছে।
- বিগত মাসগুলোতে খুলনা ও বরিশালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিএনপিপন্থি উপাচার্যদের সরিয়েছে সরকার।
- ছাত্রদল বলছে, ঢাবিতে ছয় মাসে দুজন খুন, তাই উপাচার্যের পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বিকল্প মতামত
- কিছু সংগঠক ও শিক্ষার্থী বলছে, সাম্য হত্যার দায় প্রশাসনের নয়, বরং এটি শহরের অপরাধ ও মাদকের প্রভাব।
- উদ্যান এলাকাকে মাদকমুক্ত করা ও স্থায়ী গেট বসানোর দাবি তুলেছেন ছাত্রনেতা এবি জুবায়ের।
শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি ও সমর্থন দুই পক্ষের মধ্যে ক্যাম্পাসে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি করেছে। হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।