July 7, 2025
বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ

মে ১০, ২০২৫

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গভীর মোড়বদলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বৈঠকে প্রধান দুটি সিদ্ধান্ত গুরুত্ব পেয়েছে:
১. আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা,
২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও পটভূমি

এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়ে, যখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণআন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘটে গেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারায়। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতা হারানোর সময় ও তার আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব গণহত্যা ও গুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে এবং তদন্ত প্রসারিত হচ্ছে।

আইন সংশোধনের তাৎপর্য

১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে প্রণীত হয়েছিল। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আইনটি সংশোধন করে রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীকে বিচারের আওতায় আনার সুযোগ তৈরি করেছে। এই সংশোধনী ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আইনি ব্যবস্থার জন্য একটি নজির স্থাপন করতে পারে।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ: আইনি ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম, অনলাইন ও অফলাইন, নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যদিও এই নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা হিসেবে সরকার দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং সাক্ষী ও বাদীদের সুরক্ষার কথা বলেছে, তবে এটি বিরোধী রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নও উত্থাপন করে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রপন্থী শক্তি ও মানবাধিকার সংগঠনসমূহ এই সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক প্রতিশোধ’ বা ‘দমনমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে দেখতে পারে।

জুলাই আন্দোলনের প্রভাব ও পরিণতি

এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটি বড় চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে “জুলাই আন্দোলন”। তাদের লাগাতার কর্মসূচি, আন্দোলন ও দাবি—যার অন্যতম ছিল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ—অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপের মুখে ফেলেছে। ফলে উপদেষ্টা পরিষদ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে ধারণা করা যায়।

সম্ভাব্য পরিণতি ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও তীব্র করতে পারে। এর ফলে দেশ দুই বিপরীত মেরুর মধ্যে ভাগ হয়ে যেতে পারে—একদিকে গণ-আন্দোলন এবং অন্যদিকে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি। এ ধরনের পরিস্থিতি দেশে একটি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে যদি না এটি একটি আইনি ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

আন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কার ও দায়বদ্ধতার পথে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, তবে এটি কতোটা গ্রহণযোগ্য ও স্থায়ী হয়, তা নির্ভর করবে আইনি প্রক্রিয়া, স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক উদারতার ওপর। সময়ই বলবে, এটি ইতিহাসের গতি বদলের সূচনা না কি নতুন দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।

Leave a Reply