
উপহার দিয়ে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করা নিষিদ্ধের সুপারিশ
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক সুপারিশগুলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে। নিচে এ সুপারিশগুলোর একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:
১. চিকিৎসক ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সম্পর্ক সংক্রান্ত নীতি
কমিশন সুপারিশ করেছে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের উপহার বা ওষুধের নমুনা দিয়ে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে। এই সুপারিশ চিকিৎসা পেশায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। এর ফলে প্রেসক্রিপশন বাণিজ্য হ্রাস পাবে এবং রোগীরা প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ওষুধ ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন।
২. ভ্যাট-কর মওকুফ সংক্রান্ত সুপারিশ
ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের মতো দীর্ঘমেয়াদী রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের ওপর ভ্যাট ও কর মওকুফের প্রস্তাব অত্যন্ত সময়োপযোগী। এসব রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল, এবং কর মওকুফের ফলে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পাবে।
৩. অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ ও প্রাপ্যতা
কমিশন অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতি দুই বছর অন্তর তালিকা হালনাগাদ করার সুপারিশ করেছে। এছাড়া, এসব ওষুধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তুকিমূল্যে সরবরাহের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই সুপারিশ স্বাস্থ্যসেবার সাম্য প্রতিষ্ঠা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
৪. প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা
সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হতে পারে। এটি নিশ্চিত করলে সরকার বাধ্য থাকবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে, যা সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবার সমতা ও নাগরিক অধিকারের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
৫. বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস গঠনের প্রস্তাব
একটি স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য প্রশাসন ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি প্রশাসনিক কাঠামোতে সংস্কার এনে স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের পথ সুগম করতে পারে।
৬. সরকারি হাসপাতালে জনবল নিয়োগ ও নতুন হাসপাতাল নির্মাণ
জনবল সংকট মোকাবিলা এবং বিদেশে চিকিৎসা নির্ভরতা কমাতে দেশেই আধুনিক হাসপাতাল গড়ার সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকাংশে স্বনির্ভর হবে। রোগীদের বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া কমবে এবং অর্থনীতির ওপর চাপও কমবে।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। এসব পদক্ষেপ স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি, প্রাপ্তিযোগ্যতা, এবং সামর্থ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় সহায়ক হবে।