July 16, 2025
হত্যাকারী শনাক্ত করা যাচ্ছে না ডিএনএ অস্পষ্টতায়

হত্যাকারী শনাক্ত করা যাচ্ছে না ডিএনএ অস্পষ্টতায়

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার (মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক) ও মেহেরুন রুনি (এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক)-কে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতের বেলায় ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর পরও হত্যার মোটিভ বা হত্যাকারীদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি গঠিত টাস্কফোর্সের অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। নিচে বিষয়গুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো:

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ:

  • হত্যার সময়:
    ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে।
  • খুনের ধরণ:
    প্রথমে সাগর, পরে রুনি ছুরিকাঘাতে নিহত হন।
    তারা দু’জনই অনেকক্ষণ জীবিত ছিলেন, যার প্রমাণ শরীরে ক্ষতের ধরন।
  • সন্তান মেঘ:
    হত্যাকাণ্ডের সময় সন্তান মেঘ একই খাটে ঘুমিয়ে ছিলেন।
  • প্রবেশের প্রমাণ:
    বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
    রান্নাঘরের বারান্দার একটি নতুন ভাঙা অংশ (~১৪.৫ ও ৮.৫ ইঞ্চি) দিয়ে কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারে বলে ধারণা।

ডিএনএ ও ফরেনসিক বিশ্লেষণ:

  • ঘটনাস্থল থেকে চারজনের ডিএনএ পাওয়া গেছে:
    • তিনজন পুরুষ
    • একজন নারী
    • এর মধ্যে দু’জন হলেন সাগর ও রুনি।
    • অজ্ঞাতপরিচয় দুই পুরুষের ডিএনএ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, কারণ নমুনায় ৫–৬ জনের মিশ্র ডিএনএ ছিল।
  • যুক্তরাষ্ট্রের IFS ল্যাবে ডিএনএ পাঠানো হয়।
    র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, দু’জন অপরিচিত পুরুষের উপস্থিতি নিশ্চিত হলেও, কারা তারা—তা শনাক্ত করা যায়নি।

প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতা:

  • ভিসেরা রিপোর্টে চেতনানাশক বা বিষ জাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি।
  • আলামত নষ্ট হয়েছে:
    হত্যার পরদিন সকাল ১০টা-১১টার মধ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পৌঁছালেও, তার আগেই সাংবাদিক ও স্থানীয়দের চলাচলে আলামত নষ্ট হয়ে যায়।
  • ফুটপ্রিন্ট স্পষ্ট নয়:
    বারান্দার অংশ দিয়ে প্রবেশ-প্রস্থান সম্ভব হলেও পূর্ণাঙ্গ পদচিহ্ন পাওয়া যায়নি।

টাস্কফোর্সের অগ্রগতি ও জিজ্ঞাসাবাদ:

  • হাইকোর্টের নির্দেশে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠিত হয়।
  • প্রথম ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও সম্ভব হয়নি। অতঃপর ২২ এপ্রিল আরও ছয় মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়।
  • ১২ জনকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে সাতজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
  • তবে কারো বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি, পাওয়া যায়নি নতুন তথ্যও

আইনি প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যত পদক্ষেপ:

  • ২২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে হবে আদালতে।
  • বাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির জানিয়েছেন, এখনো আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়নি, কেবল একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয়েছে।
  • হত্যার পর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
  • দীর্ঘদিন ধরে মামলা র‌্যাব, ডিবি ও পরে সিআইডির মাধ্যমে তদন্ত চললেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।

Leave a Reply