
ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলা, প্রতিবাদমুখর শোবিজ অঙ্গন
বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাজধানীর মিরপুরে বিএনপি কর্মী মাহফুজ আলম শ্রাবণ হত্যার অভিযোগে অভিনেতা ও ব্যবসায়ী ইরেশ যাকেরসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের ঘটনা এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ইরেশ যাকের, যিনি এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং একজন খ্যাতিমান অভিনেতা, তার বিরুদ্ধে এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন শোবিজ অঙ্গন ও সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
নিহত শ্রাবণের ভাই আদালতে মামলা দায়ের করার পরপরই, অনুরাগী এবং শোবিজ তারকাদের মধ্যে থেকে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ পেতে থাকে। অনেক তারকাই মনে করেন, ইরেশ যাকের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্মুখসারিতে থেকে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিশেষত অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ইরেশের বিরুদ্ধে এই মামলা তাদের জন্য অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং হতাশাজনক। একইভাবে নির্মাতা আশফাক নিপুণও দাবি করেন, ইরেশ যাকের ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের’ প্রতিবাদে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার অপচেষ্টা।
অন্যদিকে, রাফিয়াথ রশীদ মিথিলা এবং নির্মাতা শিহাব শাহীন সরাসরি ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে ওঠা মামলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, কিভাবে একজন আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সদস্যের বিরুদ্ধে এমন মামলা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আরজে কিবরিয়ার মন্তব্যও তাৎপর্যপূর্ণ — তিনি প্রশ্ন রাখেন, আসল অপরাধীদের বিচারের ইচ্ছা আসলেই কতটুকু আছে?
এছাড়া উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এর আগে কর ফাঁকির অভিযোগে এনবিআর ইরেশ যাকেরের কোম্পানি এশিয়াটিক এমসিএলের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছিল। এর সাথে এখন হত্যার অভিযোগ যোগ হওয়ায় মনে করা হচ্ছে, এটি ব্যক্তি ইরেশ যাকেরকে নানাভাবে চাপের মুখে ফেলার একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা হতে পারে। বিশেষ করে যখন তিনি একটি বড় সামাজিক ন্যায়বিচারের আন্দোলনে দৃশ্যমান ভূমিকা রেখেছিলেন।
অভিনেতা টুটুল চৌধুরীর বক্তব্য পরিস্থিতির আরেকটি দিক উন্মোচন করে — দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাথে ‘মেধাবী’ এবং ‘মেধাবীতর’ ব্যক্তিদের সুবিধাভোগ ও অবস্থান পরিবর্তনের বাস্তবতাকে তিনি ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। রেদওয়ান রনি আরও একধাপ এগিয়ে মামলাটিকে “লজ্জাজনক ও ষড়যন্ত্রমূলক” বলে উল্লেখ করেছেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সার্বিকভাবে এই ঘটনা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক-সামাজিক পরিবেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, আন্দোলন-সংগ্রামের প্রতি সরকারি মনোভাব এবং ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। শোবিজ অঙ্গনের মানুষদের প্রতিবাদ এই ইঙ্গিত দেয় যে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহারে পক্ষপাতিত্ব এবং আন্দোলনকারীদের দমন নীতির অভিযোগ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। এর ফলে গণতান্ত্রিক চর্চা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।