July 8, 2025
৩৩ বছরে রাষ্ট্রপতি কতজনের দণ্ড মাফ করেছেন জানতে চেয়ে রুল

৩৩ বছরে রাষ্ট্রপতি কতজনের দণ্ড মাফ করেছেন জানতে চেয়ে রুল

এপ্রি ২১, ২০২৫

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক গত ৩৩ বছরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার মাধ্যমে কতজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুক্তি পেয়েছেন, তার বিস্তারিত তালিকা প্রকাশের দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করে জানতে চেয়েছে, কেন ওই তালিকা প্রকাশ করা হবে না।

এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে:

  • মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে
  • স্বরাষ্ট্র সচিবকে
  • রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিবকে

রুলটি জারি করেছেন বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির “ক্ষমা প্রদানের” ক্ষমতা রয়েছে। এটি একটি একক সাংবিধানিক ক্ষমতা, যা রাষ্ট্রপতি প্রয়োগ করে থাকেন বিশেষ পরিস্থিতিতে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই এ ক্ষমার প্রয়োগ নিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন উঠছে।

ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ২০২3 সালের ২৫ আগস্ট একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান, যেখানে তিনি ১৯৯১ থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা কমানোর সংখ্যা ও তালিকা প্রকাশের অনুরোধ করেন। সরকার নির্ধারিত সময়সীমায় সাড়া না দেওয়ায় তিনি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

১. স্বচ্ছতা ও জনস্বার্থের প্রশ্ন:

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ক্ষমতা অনেকটা “প্রেসিডেনশিয়াল প্রিভিলেজ” হলেও এটি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়। গণতন্ত্রে, বিশেষ করে বাংলাদেশে যেখানে বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, সেখানে কারা কোন প্রক্রিয়ায় ক্ষমা পেয়েছেন তা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।

২. বিচারব্যবস্থার ভারসাম্য:

রিটে বলা হয়েছে, অনেক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিশেষ তদবির বা রাজনৈতিক সুপারিশে মুক্তি পেয়েছেন এবং তারা আবার অপরাধে জড়িয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার অপব্যবহার রোধে একটি নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

৩. সংবিধান বনাম জনগণের অধিকার:

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সংবিধানপ্রদত্ত হলেও তার প্রয়োগ নিয়ে তথ্য জানার অধিকারও সংবিধানই দেয় (সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে তথ্য জানার অধিকার স্বীকৃত)। অতএব, কোন পর্যায়ে এই ক্ষমা প্রয়োগ ন্যায্য এবং কোন পর্যায়ে তা জনস্বার্থ বিরোধী, সেই পর্যালোচনার সুযোগ থাকা উচিত।

৪. রুল জারির তাৎপর্য:

হাইকোর্টের এই রুল দেশের বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হতে পারে। যদি আদালত ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেয়, তাহলে এটি হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ — যা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক মানদণ্ড প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

Leave a Reply