
ডিসেম্বরে নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যের চেষ্টা বিএনপির
২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়, এবং সেই অনুযায়ী মতবিনিময় শুরু হয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনের বাইরেও নতুন সংলাপের উদ্যোগ
বিএনপি শুধু যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গেই নয়, বরং বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় এমন দল, জোট ও সংগঠনগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে। আজ শনিবার বিকেলে ১২-দলীয় জোট এবং সন্ধ্যায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে শিগগিরই
দলটির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মতবিনিময় শেষ করে বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জামায়াত ও এনসিপির অবস্থান এখনও অনির্ধারিত
এই উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থাকবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে বসার সিদ্ধান্ত হয়নি।
অন্য এক সদস্য বলেন, “এনসিপির সঙ্গে কথা বলব কি না, সেটা দেখতে হবে। কারণ, তাদের দুজন সরকারে রয়েছে।”
কেউ বাদ নয়, অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের সম্ভাবনা
তবে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য ইঙ্গিত দিয়েছেন, আলোচনা থেকে কাউকে সরাসরি বাদ দেওয়ার কথা আসেনি। আলোচনার প্রাথমিক ধাপে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের চিন্তাভাবনা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর নতুন গতি
বিএনপির এই সংলাপের উদ্যোগ নতুন মাত্রা পায় ১৬ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেন। কিন্তু বিএনপি এই প্রস্তাবে সন্তুষ্ট নয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক শেষে বলেন, “আমরা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট নই। আমাদের ‘কাটঅফ টাইম’ ডিসেম্বর।”
শরিকদের সঙ্গে আলোচনা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, তা আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে শেয়ার করব। এরপর সবার মতামত নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বাইরেও যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বলব।”
বড় আন্দোলনের আগে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ
স্থায়ী কমিটির একটি সূত্র জানায়, সরকারের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে দু-এক মাস রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পরই মাঠের কর্মসূচি বা বড় আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো।
বিএনপি এখন দৃশ্যত দ্বি-মুখী কৌশল নিচ্ছে—একদিকে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গঠন, অন্যদিকে সরকারের নির্বাচনি প্রস্তাব পর্যবেক্ষণ। ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানে চাপ তৈরি করাই তাদের মূল লক্ষ্য। তবে জামায়াত ও এনসিপির অবস্থান, সেই চাপ কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।