
জাতীয় ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত ঐক্যবদ্ধ থাকবে
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের সাম্প্রতিক বক্তব্য দেশটির রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পথসভা এবং লাকসাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে তিনি যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী।
আন্দোলন ও রাজনৈতিক ঐক্যের বার্তা
গোলাম পরওয়ারের দাবি অনুযায়ী, বিএনপি ও জামায়াত গত ১৬ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েও শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে পেরেছে। এটি একপ্রকার রাজনৈতিক বিজয়ের দাবি। যদিও এই বক্তব্য বাস্তবতার সঙ্গে কতটা মিল রয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে জামায়াত যে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি ও প্রাসঙ্গিকতা নতুনভাবে তুলে ধরতে চাচ্ছে, তা স্পষ্ট।
বিচার ও নির্বাচনের সময়সীমা
তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছরে জামায়াত নেতাদের হত্যা করে দেশকে ‘রক্তের বন্যায়’ ভাসানো হয়েছে, এবং শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের বিচার দাবি করেন। পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সংস্কার ও মানবতাবিরোধীদের বিচার করে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেন। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে একটি ‘ডেডলাইন’ দেওয়া হয়েছে—২০২৬ সালের জুন অথবা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
নির্বাচনী অংশগ্রহণে প্রস্তুতি
সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের নির্বাচনী অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, পরওয়ারের বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়, তারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী এবং প্রস্তুত। এতে বোঝা যায়, রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা থেকে দলটি ধীরে ধীরে সক্রিয় ভূমিকায় ফিরে আসতে চাইছে।
প্রার্থী ঘোষণা ও তৃণমূলে প্রস্তুতি
কুমিল্লা অঞ্চলের চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছেন পরওয়ার। যা প্রমাণ করে, জামায়াত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়েও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে তারা দলীয় শৃঙ্খলা ও সাংগঠনিক কাঠামোর পুনর্গঠন নিশ্চিত করতে চাচ্ছে।
মিয়া গোলাম পরওয়ারের বক্তব্য ও দলীয় অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামী একদিকে শেখ হাসিনার সরকারের কঠোর সমালোচনা করছে, অন্যদিকে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার ইঙ্গিতও দিচ্ছে। এটি একধরনের কৌশলগত অবস্থান—যেখানে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনমুখী রাজনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অবস্থান ও কার্যক্রমের ওপর।