July 16, 2025
বাণিজ্যযুদ্ধে ট্রাম্প নাকি চিন পিং—কে আগে হার মানবেন

বাণিজ্যযুদ্ধে ট্রাম্প নাকি চিন পিং—কে আগে হার মানবেন

এপ্রি ১৮, ২০২৫

বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান শক্তি—যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যসংক্রান্ত উত্তেজনা দিনে দিনে গভীরতর হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থানের ফলে এই বাণিজ্যযুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

১. শুল্ক আরোপ ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার পাল্টা জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এর ফলে চীনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, উভয় দেশের অর্থনীতিতেই এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।

২. ট্রাম্পের কৌশল ও তার দুর্বলতা

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন যে চীন বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে। কিন্তু তাঁর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আসলে কোন লক্ষ্য অর্জিত হবে, তা স্পষ্ট নয়। বিশ্লেষক হ্যারি ব্রডম্যান প্রশ্ন তুলেছেন, ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান, নাকি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করতে চান—এ বিষয়ে তাঁর নীতিগত পরিষ্কার ধারণা নেই।

বিশ্লেষক রবার্ট রোগৌস্কি মনে করেন, ট্রাম্প বিশেষ স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর চাপের মুখে ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছেন। শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এবং এতে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

৩. চীনের প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া

চীন গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে। মার্কিন কৃষিপণ্য—যেমন সয়াবিন—রপ্তানি কমিয়ে ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশের দিকে ঝুঁকেছে। সি চিন পিং নিজেকে শক্তিশালী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দ্রুত আত্মসমর্পণ তাঁর ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

চীনের পক্ষ থেকে বোয়িং বিমানের সরঞ্জাম কেনা বন্ধ, ডাক সেবা স্থগিতসহ নানা পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

৪. ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও ঝুঁকি

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্যযুদ্ধে কে জয়ী হবেন তা নির্ভর করছে কে বেশি চাপ সহ্য করতে পারেন তার ওপর। ট্রাম্প হয়তো প্রথমে পিছু হটবেন, কিন্তু চীনও দীর্ঘ মেয়াদে শুল্ক যুদ্ধে অংশ নিয়ে অনেক ক্ষতির মুখোমুখি হবে।

বিশ্বব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র এখনো গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক নির্ভরতার ক্ষেত্রে তার অবস্থান কিছুটা দুর্বল হয়েছে। অনেক দেশ এখন বিকল্প বাণিজ্য সহযোগী খুঁজছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ কেবল দুটি দেশের মধ্যকার বিষয় নয়, বরং এর প্রভাব গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে। উভয় পক্ষের মধ্যে যদি সমঝোতার ভিত্তিতে আলোচনা না হয়, তবে এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং এতে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা আরও বাড়বে। সমঝোতার পথ খুঁজে নেওয়া এখন সময়ের দাবি, যাতে দুই দেশই “বিজয়ী” হিসেবে বেরিয়ে আসতে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে।

এই বাণিজ্যযুদ্ধ হলো অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা, কৌশলগত অবস্থান ও রাজনৈতিক ক্ষমতার এক জটিল লড়াই। এর পরিণতি নির্ধারণ করবে আগামীর বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্কের দিকনির্দেশনা।

Leave a Reply