
নির্বাচন নিয়ে এখনই মাঠে নামছে না বিএনপি
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে সন্তুষ্ট না হলেও তাৎক্ষণিকভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাচ্ছে না বিএনপি। বরং দলটি ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ধারনায় সমর্থন দিয়ে সামনে এগোতে চায়। পাশাপাশি নির্বাচন ইস্যুকে কেন্দ্র করে সমমনা দল, মত ও সংগঠনগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে যাচ্ছে দলটি।
প্রতীক্ষা, প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা
বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, এখনই রাজপথে কঠোর আন্দোলনে গেলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে এবং এতে সরকারবিরোধী উদ্যোগের দায়ভার তাদের ওপর পড়তে পারে। তাই সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও কৌশল নির্ধারণের পক্ষে তারা। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের জন্য বিকল্প প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি।
দলীয় সূত্র জানায়, আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা, মহানগর এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা ও মিছিলের আয়োজন করা হবে।
রোডম্যাপ না থাকলেও মাঠে সক্রিয় থাকার কৌশল
বিএনপির মতে, সরকার এখনো স্পষ্ট কোনো নির্বাচনী রোডম্যাপ দেয়নি। ফলে এ মুহূর্তে রাস্তায় নামার মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চাপ তৈরি করতে চায় দলটি, যাতে সরকার নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুত ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়।
এক নেতা বলেন, “রোডম্যাপ এলে পুরো দেশ নির্বাচনী আমেজে প্রবেশ করবে, তখন কোনো ষড়যন্ত্র কাজ করবে না। তবে প্রত্যাশিত রোডম্যাপ না পাওয়ায় আমাদের মাঠে থাকতে হবে।”
সমমনা দলগুলোর সঙ্গে এক প্ল্যাটফর্মে আসার চেষ্টা
বিএনপি শিগগিরই গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বিভিন্ন ডান-বাম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করছে। এই আলোচনা হবে নির্বাচনপ্রক্রিয়া, অন্তর্বর্তী সরকার এবং যুগপৎ কর্মসূচি ঘিরে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানান, নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি আসছে, যা ইতিবাচক। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও তারা কোনো বৈঠকের আমন্ত্রণ পাননি। আমন্ত্রণ পেলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদাও জানান, তারাও শিগগির বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নেবেন।
তৃণমূল থেকে ঢাকায় বৃহৎ সমাবেশের পরিকল্পনা
বিএনপির সাংগঠনিক নেতারা সাম্প্রতিক বৈঠকে সাংগঠনিকভাবে দলকে আরও সক্রিয় করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে থাকবে—
- ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে ধাপে ধাপে সভা-সমাবেশ ও পদযাত্রা
- জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে ভোটবঞ্চনা ও নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা
- শেষ পর্যায়ে ঢাকায় একটি বৃহৎ সমাবেশের আয়োজন
সাংগঠনিক সচেতনতা ও নিয়মতান্ত্রিক চাপ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, তারা সরাসরি সরকারের পতনের দাবি নয় বরং শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচনের জন্য চাপ অব্যাহত রাখবে। সরকারের ব্যর্থতা যেন দেশের ক্ষতির কারণ না হয়, সে দিকেও দৃষ্টি দিচ্ছে দলটি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন,
“গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপির মূল শক্তি জনগণ। জন্মলগ্ন থেকে বিএনপি জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে কৌশলী অবস্থান নিচ্ছে। রাজনৈতিক বাস্তবতা, জনগণের প্রত্যাশা ও দলীয় কৌশল—তিনটি বিষয় মাথায় রেখেই বিএনপি নির্বাচন ইস্যুতে অবস্থান শক্তিশালী করার পথে এগোচ্ছে। সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি ও সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় থাকতে চায়।