
ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো হামাস
ইসরায়েলের দেওয়া ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। প্রস্তাবটিতে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছিল, কিন্তু যুদ্ধের চূড়ান্ত সমাপ্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় হামাস এ প্রস্তাব নাকচ করে।
একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হামাসের মূল দাবি— স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার— প্রস্তাবে অনুপস্থিত ছিল। বরং এতে ছিল হামাসের হাতে থাকা জীবিত জিম্মিদের অর্ধেককে মুক্তি দেওয়ার শর্ত।
গাজায় চলমান হামলা ও মানবিক বিপর্যয়
প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের খবর এমন এক সময় এলো, যখন গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি খান ইউনিসে একটি ফিল্ড হাসপাতালে বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েল দাবি করেছে, এটি হামাসের একটি সেলের ওপর হামলা।
ইতিমধ্যে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ১৮ মাস পার হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই সময়ে মানবিক পরিস্থিতি চরম খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। ছয় সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। জাতিসংঘ এই অবরোধকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
হামাসের শর্ত ও ইসরায়েলের অবস্থান
হামাস জানিয়েছে, তারা তাদের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি, তবে তার বিনিময়ে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি এবং গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার চায়। এ দাবিকে ইসরায়েল এখনও মেনে নেয়নি। যুদ্ধবিরতির আলোচনায় এবারই প্রথমবারের মতো ইসরায়েল হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্ত জুড়ে দিয়েছে, যা হামাসের জন্য ‘রেডলাইন’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আলোচনার অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর কাছে নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব তুলে ধরেন। এরপর হামাসের একটি প্রতিনিধি দল মিসরের রাজধানী কায়রোয় মিসরীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে।
তবে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল কৌশলে সময়ক্ষেপণ করছে এবং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে, যাতে হামাসের হাতে থাকা বাকি ৫৯ জন জিম্মিকে উদ্ধারে চাপ প্রয়োগ করা যায়।
প্রাণহানির চিত্র
ইসরায়েলের গণহত্যাসদৃশ অভিযানে গাজায় গত ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে হামলা জোরদার হওয়ার পর ১ হাজার ৬৩০ জন নিহত হন। মোট নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।