
মায়ামির মায়া ছাড়তে পারছেন না মেসি
লিওনেল মেসি ফুটবলবিশ্বের এক জীবন্ত কিংবদন্তি। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে দুই দশকের রাজত্ব, বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার মুকুট, এবং বার্সেলোনা-প্যারিস থেকে ইন্টার মায়ামি—মেসির পথচলা কেবল ইতিহাস নয়, এক অনুভূতির নাম। জুনে বয়স ৩৮ ছোঁবে, তবুও প্রতিটি গোলের পর উচ্ছ্বাস, চোখে জল, সন্তানের দিকে ছুটে যাওয়া, আকাশে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ—এই আবেগই যেন প্রমাণ করে, তার কাছে ফুটবল এখনও শুধুই খেলা নয়, এটি জীবনের আত্মা।
ফুটবল নয়, ভালোবাসা হচ্ছে মূল চালিকাশক্তি
অনেকেই বলেন, এমএলএস (মেজর লিগ সকার) ইউরোপিয়ান ফুটবলের তুলনায় ‘নিচু মানের’ লিগ। প্রশ্ন আসে, মেসির মতো একজন তারকা কেন এই পর্যায়ে এসেও একই আবেগ নিয়ে মাঠে নামছেন?
এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো ফুটবলের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা। তবে, তার চেয়েও বড় একটি বিষয় হচ্ছে—বাবা হিসেবে সন্তানের সামনে নিজেকে ‘নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরার অদম্য ইচ্ছা। মায়ামির মাঠে প্রতিটি ম্যাচে যখন তার সন্তানরা উপস্থিত থাকে, মেসি যেন নিজের জীবনের নতুন প্রেরণা খুঁজে পান তাদের চোখে।
মায়ামির প্রতি ‘মায়া’: শুধুই টাকা নয়, পরিবারের স্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ
মেসির মায়ামিতে আসার পেছনে শুধু আর্থিক দিক নয়, বরং পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্যও ছিল অন্যতম কারণ। সৌদি ক্লাব থেকে দ্বিগুণ বেতন অফার পেয়েও তিনি পাড়ি জমান মায়ামিতে।
- সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি
- নিজের ভাষাভাষী মানুষের সহজলভ্যতা
- ইউরোপের চাপমুক্ত ফুটবল পরিবেশ
এই সবকিছুই ছিল তাঁর এই সিদ্ধান্তের ভিত্তি।
চুক্তি নবায়ন: পরিকল্পনার কেন্দ্রে মেসি
২০২৩ সালের জুনে মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৮ ম্যাচে ৪১ গোল ও ২১ অ্যাসিস্ট—এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, মেসির ধার এখনও কাটেনি।
এ কারণেই ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করতে চায় ইন্টার মায়ামি।
- একই বছর ইন্টার মায়ামির নতুন ১ বিলিয়ন ডলারের স্টেডিয়াম উদ্বোধন হবে।
- ক্লাব কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছে: “১০ নম্বর জার্সি গায়ে মেসিকেই দিয়েই এই স্টেডিয়াম উদ্বোধন করা হবে।”
পরিবার-ফুটবল-ভবিষ্যৎ: সবকিছুই এখন মায়ামিকেন্দ্রিক
মেসির বড় ছেলে থিয়াগো (১২) এবং মেজ ছেলে মাতেও (৮) ইতোমধ্যে মায়ামির ইয়ুথ লিগে খেলছে। পরিবারের ভবিষ্যৎ, জীবনের স্থিরতা, ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা—সবকিছু মিলিয়ে এখন মায়ামিই যেন মেসির দ্বিতীয় জন্মভূমি।
লিওনেল মেসির মায়ামিতে থাকা কেবল একটি পেশাদার সিদ্ধান্ত নয়—এটি একজন মানুষ, একজন বাবা, একজন খেলোয়াড়ের জীবনবোধের বহিঃপ্রকাশ। আর তাই, বয়স যতই বাড়ুক, মাঠে নামার সময় তিনি এখনো আঠারোর সেই আবেগী কিশোর। ফুটবলের প্রতি, পরিবারের প্রতি, এবং জীবনের প্রতি এক গভীর মায়াই হয়তো তাকে থামতে দিচ্ছে না—বরং আরও একবার ইতিহাস লিখতে বাধ্য করছে।