July 7, 2025
শেখ হাসিনার দোসররা চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

শেখ হাসিনার দোসররা চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

এপ্রি ১২, ২০২৫

বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে প্রতিবছরই আয়োজন করা হয় ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’—যা এদেশের সংস্কৃতির একটি প্রগতিশীল ও সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী প্রতীক হয়ে উঠেছে। এবারের শোভাযাত্রার জন্য তৈরি ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ দুটি শনিবার ভোরে দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনার তাৎপর্য কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকর্ম ধ্বংসে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক হামলা—যার পেছনে রয়েছে একটি ভয়াবহ রাজনৈতিক বার্তা।

চারুকলা অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বক্তব্য অনুযায়ী, ঘটনার সময় দায়িত্বরত মোবাইল টিম নামাজ আদায়ে গিয়েছিলেন। এই সময় ব্যবধানেই দুর্বৃত্তরা কৌশলে আগুন লাগিয়ে দেয়। ফলে ধরে নেওয়া যায়, এ ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং সুযোগ বুঝে সংঘটিত।

ফ্যাসিবাদের প্রতীকী মুখাবয়বের পাশাপাশি শান্তির প্রতীক ‘পায়রা’ পুড়িয়ে ফেলা—এটি নিছক ভাঙচুর নয়; এটি একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক ও আদর্শিক বার্তা বহন করে। এমন একটি সময়ে যখন শোভাযাত্রাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমসাময়িক রাজনীতি-বিষয়ক বার্তায় সমৃদ্ধ করার চিন্তা করা হচ্ছিল, তখন এই ধরণের ঘটনা মূলত ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধকে স্তব্ধ করে দিতে চায়।

ফারুকীর প্রতিক্রিয়া: একটি অবস্থান

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ফেসবুক পোস্টে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট হয়—তিনি এ ঘটনাকে নিছক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মনে করছেন না, বরং এটিকে একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন। ফারুকী ‘হাসিনার দোসর’ বলে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ইঙ্গিত দিয়েছেন, এবং বলেছেন, যারা এই কাজের সাথে যুক্ত—তারা ‘সফট’ হোক বা ‘বি টিম’—তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

তার বক্তব্যে আরও উঠে আসে যে, এই হামলার কারণে বর্ষবরণ শোভাযাত্রার তাৎপর্য আরও বেড়ে গেছে। এটি কেবল সাংস্কৃতিক উৎসব নয়, বরং একধরনের প্রতিরোধও বটে।

সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা

ঘটনাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—সংস্কৃতি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি সমাজের রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিবিম্বও। যখনই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বৈরশাসনের প্রতীক বা আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তখনই তা দমন করতে চায় একটি গোষ্ঠী। এই আগুন আসলে একটি মুখোশ পুড়িয়ে দেয়নি; এটি ভয়ের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছে।

কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলন কখনোই ভয় বা দমননীতির কাছে পরাজিত হয়নি। বরং এসব ঘটনা আরও জনসম্পৃক্ততা তৈরি করে, মানুষকে সচেতন করে এবং উৎসবকে দেয় নতুন তাৎপর্য।

চারুকলার মোটিফ পোড়ানো একটি সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরে। এই ঘটনার প্রতিবাদ শুধু আইনি প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এর বিরুদ্ধে প্রয়োজন বৃহত্তর সাংস্কৃতিক ঐক্য, যেখানে সকল মত-পথের মানুষ একত্রিত হয়ে উৎসবের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ ও দমননীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। এবারের বর্ষবরণ শোভাযাত্রা যেন সেই ঐক্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে ওঠে—এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।

Leave a Reply