
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া গেল ২৮ বস্তা টাকা, চলছে গণনা
কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদ দীর্ঘদিন ধরেই ধর্মপ্রাণ মানুষের অগাধ বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রতি তিন মাস অন্তর খোলা হয়ে থাকে মসজিদের ১১টি দানবাক্স। এবার রমজানের কারণে চার মাস ১২ দিন পর বাক্সগুলো খোলা হয় এবং এতে পাওয়া যায় ২৮ বস্তা টাকা, যা দানের পরিমাণ ও মানুষের আস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন।
এই দানে শুধু দেশীয় মুদ্রাই নয়, পাওয়া গেছে বিদেশি মুদ্রা, অলংকার, এবং অসংখ্য চিরকুট—যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ তাদের আকাঙ্ক্ষা, কৃতজ্ঞতা ও মানত ব্যক্ত করেছেন। দানবাক্সের বাইরেও মানুষ গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, দুধ ও সবজি দান করে থাকেন, যা পরে নিলামে বিক্রি করে মসজিদের ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়।
গত বছর ৩০ নভেম্বর ১১টি বাক্সে পাওয়া গিয়েছিল ২৯ বস্তা টাকা, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। এবার সংখ্যায় বস্তা কম হলেও দানের পরিমাণ কম হবে কিনা, তা নির্ভর করছে গণনার চূড়ান্ত ফলাফলের ওপর।
দানের টাকা গণনার কাজে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন মাদ্রাসা ও ব্যাংকের ৩৯৪ জন ব্যক্তি, যাঁদের মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক, ব্যাংক স্টাফ এবং প্রশাসনের প্রতিনিধি রয়েছেন। পুরো প্রক্রিয়াটি হয়েছে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে। দায়িত্বে ছিলেন পুলিশ, সেনাবাহিনী, আনসার এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এই বিশাল অর্থভাণ্ডার শুধু মসজিদ পরিচালনাতেই ব্যয় হয় না। জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান জানিয়েছেন, দানের অর্থ থেকে এতিম ছাত্রদের খরচ, মাদ্রাসার রক্ষণাবেক্ষণ, অসুস্থ দরিদ্রদের সহায়তা, স্টাফদের বেতন এবং মসজিদের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ সম্পাদন করা হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের শেড নির্মাণ এবং মসজিদ কমপ্লেক্স সম্প্রসারণের কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পাগলা মসজিদে শুধু মুসলমানরাই নয়, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও দান করে থাকেন, যা এই ধর্মীয় স্থাপনাকে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণে পরিণত করেছে।