
আ’লীগ নেতাকর্মীর ওপর ‘বাড়তি নজর’ গোয়েন্দাদের
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর বাড়তি নজরদারি: রাজনৈতিক উত্তাপ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরও জোরদার হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গোয়েন্দাদের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তৃণমূল থেকে সংগঠিত হয়ে রাজধানী ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করছে। এই সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে ঢাকাসহ সারা দেশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তিনটি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নেতাকর্মীদের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে যাদের নামে মামলা রয়েছে, তাদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারও সরকারবিরোধী বা ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নৌঘাট, রেলস্টেশন এবং বাসস্ট্যান্ডে নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে যাতে সম্ভাব্য সমাবেশ বা সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা প্রতিহত করা যায়।
আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, থানাভিত্তিকভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে মামলার আসামিদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য, যেমন মামলার নম্বর, অভিযোগের ধরন, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর ইতিমধ্যেই জেলা ও মহানগর পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্কতা বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি সহিংসতায় জড়িত ও পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি)-কে এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা স্থানীয় পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন।
এই গোয়েন্দা নজরদারির পেছনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার কৌশল যেমন রয়েছে, তেমনি বিরোধী দলের সাংগঠনিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টাও স্পষ্ট। ক্ষমতাচ্যুত দলের তৎপরতা সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে যখন ঢাকামুখী সমাবেশ বা সংগঠিত আন্দোলনের আশঙ্কা থাকে।
তবে এই ধরনের নজরদারি ও গ্রেপ্তার অভিযান গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নও তুলতে পারে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে তা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করে তুলবে।
সবশেষে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশাসনের উদ্দেশ্য হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা। তবে এই প্রক্রিয়ায় যেন গণতান্ত্রিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ন্যায্যতা ক্ষুণ্ন না হয়— সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।