July 16, 2025
রাজধানীতে ব্যবসায়ীকে হত্যার দায়ে স্বামী–স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

রাজধানীতে ব্যবসায়ীকে হত্যার দায়ে স্বামী–স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

এপ্রি ১০, ২০২৫

প্রায় এক দশক আগে, ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর, রাজধানী ঢাকায় ঘটে যাওয়া এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এবার আদালতের রায় এসেছে। নিহত ব্যক্তি কামরুল ইসলাম ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উঠে আসে যে, রোমানা আক্তার ও তাঁর স্বামী সোহেল রানা পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেন।

সম্পর্ক ও আর্থিক লেনদেন

তদন্তে জানা যায়, রোমানার সঙ্গে কামরুল ইসলামের পূর্বপরিচয় ছিল এবং তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এই সম্পর্কের আড়ালে রোমানা কামরুলের কাছ থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সেই টাকা ফেরত না দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এই অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

হত্যাকাণ্ডের কৌশল ও পরিকল্পনা

ঘটনার দিন কামরুল ইসলাম সদরঘাট থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে তাঁর মামার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে কৌশলে তাঁকে সাভারে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে রোমানা ও সোহেল রানা মিলে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এটি ছিল সুপরিকল্পিত একটি অপরাধ, যেখানে ভিকটিমকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁদে ফেলা হয়।

আইনি প্রক্রিয়া ও বিচার

ঘটনার পর নিহতের খালা রেহেনা পারভীন বাদী হয়ে মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার পর ২০১৭ সালে অভিযোগপত্র এবং ২০১৮ সালে অভিযোগ গঠন করা হয়। অবশেষে ২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল আদালত রায় ঘোষণা করেন এবং অভিযুক্ত দম্পতিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

সামাজিক ও নৈতিক দিক

এই মামলাটি সমাজে প্রেম, বিশ্বাস এবং টাকার প্রলোভনের ভয়াবহ দিকটি তুলে ধরে। একটি সম্পর্ক, যেখানে আস্থা ও ভালোবাসা থাকার কথা, তা কেবল আর্থিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত প্রাণনাশে রূপ নিয়েছে।

রোমানা ও সোহেল রানার বিরুদ্ধে দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় শুধু একটি বিচারের সমাপ্তি নয়, বরং এটি সমাজকে একটি কঠিন বার্তা দেয়: আর্থিক স্বার্থে সম্পর্কের অপব্যবহার এবং ঠান্ডা মাথার অপরাধের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে। এটি আইন, নৈতিকতা ও মানবিকতার সীমারেখা অতিক্রমের এক মর্মান্তিক চিত্র।

Leave a Reply