July 16, 2025
ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের ‘অস্ত্রের’ মোকাবিলায় কি জিততে পারবে যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের ‘অস্ত্রের’ মোকাবিলায় কি জিততে পারবে যুক্তরাষ্ট্র

এপ্রি ৯, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ: ট্রাম্পের নেতৃত্বে উত্তেজনার নতুন অধ্যায়

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি—যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন এই সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যের প্রবেশের ওপর যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা কেবল দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাই বাড়ায়নি, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

শুল্ক আরোপ ও তার প্রভাব

ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক বাণিজ্যনীতির অংশ হিসেবে চীনা পণ্যের ওপর ১০৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই নীতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, চীন দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিকভাবে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করছে। কিন্তু এই শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা সাধারণ ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়াচ্ছে।

চীনের প্রতিক্রিয়া ও প্রস্তুতি

চীন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই বাণিজ্যযুদ্ধের শেষ দেখতে চায় এবং প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। দেশটি ট্রাম্পের ঘোষণার বিপরীতে নিজেদের প্রস্তুতির বিষয়টি তুলে ধরেছে এবং এও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা এই লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ইতিহাসের পটভূমি

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভিত্তি মূলত ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ঐতিহাসিক সফরের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। সে সময় চীন ছিল একটি বিচ্ছিন্ন ও দরিদ্র রাষ্ট্র। নিক্সনের সেই উদ্যোগের মাধ্যমে চীনকে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও কূটনীতির মূলধারায় আনার চেষ্টা করা হয়। এরপর ২০০১ সালে চীনকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য করা হয়, যার মধ্য দিয়ে দেশটিকে একটি নিয়মভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ

ট্রাম্প প্রশাসনের এই বাণিজ্যযুদ্ধের নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী হলেও চীন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা সহজে পিছু হটবে না। এমনকি চীনের উত্থান ও প্রভাব এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এখন তারা মার্কিন আধিপত্যকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ করছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্যযুদ্ধ এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে কেবল শুল্ক আরোপ নয়, বরং কূটনৈতিক এবং কৌশলগত দ্বন্দ্বও স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে। চীনও তাদের প্রস্তুতির মাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং তারা পিছিয়ে পড়বে না। এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশকেই কৌশলগতভাবে আরও বিচক্ষণ হতে হবে, কারণ এ ধরনের উত্তেজনা শুধু দুই দেশের নয়, বরং গোটা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a Reply