
বাড়তি শুল্ক ৩ মাস স্থগিত চেয়ে ট্রাম্পকে ড. ইউনূসের চিঠি
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠির ভাষ্য এবং প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, এটি কেবল একটি অনুরোধ নয়, বরং একটি কৌশলগত কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ।
চিঠির মূল উদ্দেশ্য
চিঠির মূল উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা। এর পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন বাণিজ্যিক স্বার্থে নানাবিধ ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি ও উদ্যোগ, যা উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ও পদক্ষেপসমূহ
চিঠিতে ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছেন যে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন বাণিজ্য এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় সহযোগিতা থাকবে। এতে উল্লেখযোগ্য কিছু দিক হলো:
- মার্কিন পণ্যের আমদানি বাড়ানো:
- তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ কৃষিপণ্য আমদানির পরিকল্পনা।
- মার্কিন কৃষকদের আয়ের সুযোগ সৃষ্টি।
- শুল্ক সুবিধা প্রদান:
- মার্কিন কৃষিপণ্য ও স্ক্র্যাপ ধাতুর ওপর শূন্য শুল্ক।
- গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জামে ৫০% শুল্ক হ্রাসের প্রতিশ্রুতি।
- বাণিজ্য সহায়ক নীতিমালা:
- বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং সুবিধা চালু।
- অশুল্ক বাধা দূরীকরণ: প্যাকেজিং, লেবেলিং সহজীকরণ, শুল্ক প্রক্রিয়ার সরলীকরণ।
- প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ সহায়তা:
- যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান “স্টারলিংক” চালুর মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নবদিগন্ত উন্মোচন।
কৌশলগত দিক
চিঠির একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো, বাংলাদেশ নিজেকে মার্কিন বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করেছে। “আমরাই প্রথম দেশ” – এ ধরনের বক্তব্যে নেতৃত্বের ইঙ্গিত রয়েছে। এটি মূলত মার্কিন প্রশাসনকে বোঝানোর প্রয়াস যে, বাংলাদেশ কেবল সুবিধা চায় না, বরং পারস্পরিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী।
চিঠির সারাংশ ও কূটনৈতিক ভাষা
চিঠির শেষাংশে ড. ইউনূস অনুরোধ জানিয়েছেন, অন্তত তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত রাখা হোক, যাতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ঘোষিত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের সময় পায়। পুরো চিঠি একটি ভারসাম্যপূর্ণ, সম্মানজনক ও বাস্তবসম্মত কূটনৈতিক ভাষায় রচিত, যা মার্কিন প্রশাসনের নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করতে পারে।
এই চিঠি কেবল একটি বাণিজ্যিক আবেদন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশল, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার একটি নিদর্শন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা এবং নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করার প্রয়াসে এমন একটি প্রস্তাব সময়োচিত এবং প্রয়োজনীয় বলেই প্রতীয়মান হয়। এখন দেখার বিষয়, মার্কিন প্রশাসন এই প্রস্তাব কীভাবে গ্রহণ করে।