
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ
নিচে দেওয়া হয়েছে প্রতিবাদের ঘটনাবলির একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখা, যা ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপট, প্রভাব এবং বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে:
গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বর্বর হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে। সেই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশও। সোমবার (তারিখ অনুযায়ী) দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাধারণ ধর্মঘট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা, রাস্তায় নেমে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং ব্যাপক গণসংহতি।
শিক্ষাঙ্গনে প্রতিবাদের ঢেউ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই দিনে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে বিক্ষোভ ও শ্লোগানমুখর অবস্থান কর্মসূচিতে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উত্তর বাড্ডায় নিজেদের ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হয়ে ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’ এবং যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, রাজু ভাস্কর্য, এবং টিএসসি এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি স্পষ্টভাবে জনমত গঠনে তাদের ভূমিকা নির্দেশ করে।
বিক্ষোভের পরিধি ও রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতি
শুধু ঢাকায় নয়, কালীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং কাঁঠালিয়ার মতো জেলা পর্যায়েও শিক্ষার্থী, নাগরিক এবং সংগঠনের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ হয়েছে। কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার উপাচার্যের নেতৃত্বে মিছিল করে তাদের অবস্থান জানায়, যা একটি প্রতিষ্ঠানিক প্রতিবাদের নিদর্শন।
অন্যদিকে, এইসব বিক্ষোভ কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। শাহবাগ ও জাতীয় জাদুঘর এলাকায় পুলিশের জলকামান, প্রিজন ভ্যান এবং বিজিবি মোতায়েনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
রাজনৈতিক নয়, মানবিক প্রতিবাদ
বাংলাদেশে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনগুলো শুধুমাত্র রাজনৈতিক অবস্থান নয়, বরং একটি মানবিক অবস্থানকে তুলে ধরে। গণহত্যার বিরুদ্ধে, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এবং একজন মানুষ হিসেবে আরেক মানুষের জীবনের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোই এ আন্দোলনের মূল স্পৃহা। শিক্ষার্থীদের এহেন সক্রিয়তা প্রমাণ করে, তারা কেবল পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বৈশ্বিক বাস্তবতায় সোচ্চার।
ফিলিস্তিন সংকটে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়—যেখানে দূর দেশে কোনো নিরীহ জনগোষ্ঠীর ওপর অন্যায় হলে, এখানকার জনগণও চুপ থাকে না। এটি গণতান্ত্রিক চেতনা, মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।