April 27, 2025
ঈদের নামাজ থেকে ফেরার সময় গোলাগুলির মধ্যে পড়েছিলেন জাহিদ হাসান

ঈদের নামাজ থেকে ফেরার সময় গোলাগুলির মধ্যে পড়েছিলেন জাহিদ হাসান

মার্চ ৩০, ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধের ঈদ ও শৈশবের স্মৃতি: জাহিদ হাসানের অভিজ্ঞতা

জাহিদ হাসানের স্মৃতিতে ১৯৭১ সালের ঈদ শুধুই আনন্দের ছিল না, বরং তা এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মারক। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি ঈদের নামাজ শেষে ফেরার পথে গোলাগুলির মধ্যে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের সেই রক্তক্ষয়ী সময়ে পাকবাহিনীর হামলা, প্লেন থেকে গুলি, এবং জীবন বাঁচাতে বাঁশঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকার অভিজ্ঞতা তাঁর শৈশবের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এত অল্প বয়সে এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তাঁকে মানসিকভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল, যা বহু বছর ধরে দুঃস্বপ্নের মতো তাঁকে তাড়া করেছে।

তাঁর বর্ণনায় উঠে এসেছে, কীভাবে সেই সময়ের আতঙ্ক তাঁর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। প্লেন থেকে গোলাগুলির শব্দ, দৌড়ে পালানোর সেই মুহূর্ত, এবং পানিতে লুকিয়ে থাকার অভিজ্ঞতা তাঁর মনে গভীর দাগ কেটেছিল। এই ভয় এতটাই প্রকট ছিল যে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত তিনি প্রায়ই দুঃস্বপ্নে দেখতেন বিশাল প্লেন তাঁকে তাড়া করছে। এটি ছিল যুদ্ধকালীন ঈদের এক নির্মম স্মৃতি, যা শৈশবের আনন্দকে ঢেকে দিয়েছিল।

যুদ্ধোত্তর স্বাধীন দেশে ঈদ

মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন দেশে ঈদের স্মৃতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুদ্ধের ভয় কেটে গিয়ে তখন ঈদ হয়ে উঠেছিল উৎসবমুখর। সিরাজগঞ্জের পাড়ায় ঈদের আগের রাতে গরু জবাইয়ের আয়োজন, চাঁদরাতে মিছিল, মশাল জ্বালানো, এমনকি কেরোসিন দিয়ে মুখের ভেতর ফুঁ দিয়ে আগুন বের করার খেলা ছিল সেই সময়ের বড় আনন্দ। তখনকার ঈদের একটি মজার ফ্যাশনও ছিল পাতলা সাদা শার্ট, যার পকেটে টাকা রাখলে দূর থেকে দেখা যেত।

জাহিদ হাসানের শৈশবের ঈদ ছিল পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে কাটানোর আনন্দে ভরা। তাঁর মা–বাবা যত দিন বেঁচে ছিলেন, তিনি সিরাজগঞ্জেই ঈদ উদযাপন করতেন। এখন পরিবার নিয়ে ঢাকায় ঈদ করেন, মাঝেমধ্যে রাস্তায় বের হন, ঘুরতে ভালোবাসেন।

জাহিদ হাসানের স্মৃতিচারণা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ভয়াবহতার পাশাপাশি স্বাধীন দেশের প্রাণবন্ত ঈদের চিত্রও তুলে ধরে। এটি প্রমাণ করে, কীভাবে সময়ের সঙ্গে ঈদের অনুভূতি পরিবর্তিত হয়—একসময় ভয় আর দুঃস্বপ্নের মধ্যে কাটানো ঈদ পরিণত হয় আনন্দ আর উদযাপনের উৎসবে। তাঁর অভিজ্ঞতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে স্বাধীনতার জন্য মানুষকে কতটা কঠিন সময় পার করতে হয়েছে এবং কীভাবে সেই কষ্টের ফাঁক গলে নতুন প্রজন্ম ঈদের খুশি ফিরে পেয়েছে।

Leave a Reply