ভবিষ্যৎ-সমৃদ্ধির জন্য এশিয়ার দেশগুলোকে রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে এশিয়ার দেশগুলোর জন্য একটি অভিন্ন রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তার বক্তব্যে তিনি মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন: অর্থনৈতিক সহযোগিতা, কৃষিতে আত্মনির্ভরতা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি।
১. টেকসই অর্থায়ন ও বাণিজ্য সহযোগিতা
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন যে, এশিয়া এখনও বিশ্বের সবচেয়ে কম সংহত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। অথচ বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্য একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। তাই তিনি অর্থনৈতিকভাবে টেকসই একটি অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। বিশেষ করে, নির্ভরযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের ওপর তিনি জোর দেন। এছাড়া, আঞ্চলিক বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন, যা এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংহতি বাড়াতে সহায়ক হবে।
২. খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি
খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এশিয়ার দেশগুলোকে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে সম্পদ-দক্ষ কৃষিকাজকে উৎসাহিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে ‘জলবায়ু-স্মার্ট’ কৃষিকাজ এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য কৃষি পদ্ধতির উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান সম্প্রসারণের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের আহ্বান জানান তিনি।
৩. প্রযুক্তিগত ইকোসিস্টেম ও ডিজিটাল সহযোগিতা
ড. ইউনূস মনে করেন, এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তিগত ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা উদ্ভাবনী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধশালী হবে। জ্ঞান ও তথ্য ভাগাভাগির মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। বিশেষ করে, ডিজিটাল সমাধানের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আঞ্চলিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মোটকথা, এশিয়ার উন্নয়নের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো, অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নিশ্চিত করাই মূল চাবিকাঠি। এশিয়ার দেশগুলো যদি একটি অভিন্ন রোডম্যাপ তৈরি করতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চল আরও সংহত ও সমৃদ্ধ হতে পারবে।
