
চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। তার এ সফর রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের নতুন মাত্রা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে এই সফরের তাৎপর্য গভীর
বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া: বাংলাদেশের ভূমিকাকে জোরদার করা
প্রধান উপদেষ্টা চীনের হাইনান প্রদেশে আয়োজিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (BFA) সম্মেলনে যোগ দেবেন। এটি এশীয় দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ফোরাম, যেখানে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। ড. ইউনূসের উপস্থিতি বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরার একটি সুযোগ হিসেবে কাজ করবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের সম্ভাবনা তুলে ধরতে পারেন তিনি।
দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক বৈঠক ও সম্ভাব্য চুক্তি
২৮ মার্চ বেইজিংয়ে ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক ইতোমধ্যেই কৌশলগত অংশীদারিত্বের স্তরে পৌঁছেছে। এই বৈঠকে নতুন বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাণিজ্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার দিং ঝুঝিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠকও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে ভবিষ্যৎ প্রকল্প ও ঋণ সহায়তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার এ সফরে ছয় থেকে আটটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং চারটি নতুন ঘোষণা আসতে পারে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ১ থেকে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা
- মোংলা বন্দরের আধুনিকায়নে চীনের বিনিয়োগ
- উচ্চপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির চুক্তি
- শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা
প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও উচ্চ শিক্ষা সংযোগ
সফরের অংশ হিসেবে ড. ইউনূস চীনের হুয়াওয়ে কোম্পানির উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন এন্টারপ্রাইজ পরিদর্শন করবেন। এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
এছাড়া চীনের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে। এই সম্মাননা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক শিক্ষাঙ্গনে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
ড. ইউনূসের এই সফর কেবলমাত্র কূটনৈতিক বা আনুষ্ঠানিক নয়; এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে চীনের সহযোগিতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে এবং ভবিষ্যতে নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের দরজা খুলে যাবে। সুতরাং, এটি শুধুমাত্র একটি কূটনৈতিক সফর নয়; বরং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।