
সুন্দরবনে তীব্রতা কমছে আগুনের, পানি সংকট
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকার তেইশের ছিলা-শাপলার বিলে আগুন লাগার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হিসেবে পরিচিত সুন্দরবন বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে, যার মধ্যে আগুন অন্যতম।
আগুন নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ
ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় আগুনের তীব্রতা কিছুটা কমলেও পানি সংকটের কারণে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। বিশেষ করে ভাটার সময় নদীতে পানি কম থাকায় আগুন নেভানো আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে করে আগুন নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে, যা বনাঞ্চলের আরও বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পরিবেশগত প্রভাব
১. বনভূমি ধ্বংস: আগুনে মূল্যবান গাছপালা ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য হুমকি।
2. বন্যপ্রাণীর জীবন সংকট: সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রে বসবাসকারী হরিণ, বাঘ, বানর ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আগুনের কারণে সরাসরি হুমকির মুখে পড়তে পারে।
3. কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি: আগুনের ফলে কার্বন নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্ভাব্য কারণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
সুন্দরবনের আগুন লাগার ঘটনা বেশিরভাগ সময় প্রাকৃতিক নয়, বরং মানবসৃষ্ট হয়ে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, মধু সংগ্রহকারীদের অসাবধানতা, বন উজাড়ের জন্য পরিকল্পিত আগুন কিংবা স্থানীয়দের অসচেতনতা অনেক সময় এই ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো হতে পারে:
- বনাঞ্চলের নিরাপত্তা জোরদার করা এবং সন্দেহভাজন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা।
- ফায়ার ব্রিগেড ও বন বিভাগের মধ্যে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
- আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখা এবং বনের মধ্যে বিকল্প জলাধার স্থাপন করা।
- স্থানীয় জনগণ ও মধু সংগ্রহকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।
সুন্দরবনের আগুনের ঘটনা শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, সামগ্রিকভাবে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের জন্যও বড় হুমকি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।