April 24, 2025
কোনো মহলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয়: মির্জা ফখরুল

কোনো মহলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয়: মির্জা ফখরুল

মার্চ ২২, ২০২৫

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন। রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেন কোনো রাজনৈতিক মহলের ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার না হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয়

বিএনপি মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকেই রাজনৈতিক দল গঠনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন, যা জনমনে সংশয় সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনের অপব্যবহারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে দলটি মনে করে।

সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে’ অথবা ‘নির্বাচন আগে, সংস্কার পরে’—এমন বিতর্কের প্রয়োজন নেই। বরং সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চালিয়ে নেওয়া সম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘সংস্কার সনদ’ (Charter of Reform) তৈরি করা যেতে পারে, যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিট নিয়ে প্রশ্ন

বিএনপি মনে করে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো স্প্রেডশিট বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। স্প্রেডশিটে শুধু ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ অপশন রয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর যথাযথ মতামত প্রকাশের সুযোগ সীমিত করে দেয়। বিএনপি দাবি করেছে—

  • মূল প্রতিবেদনে ১২৩টি সুপারিশ থাকলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ৭০টি প্রস্তাব উল্লেখ করা হয়েছে।
  • নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে মূল প্রতিবেদনে ১৫০টি সুপারিশ থাকলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি বিষয় রাখা হয়েছে।
  • সংবিধানের ‘প্রস্তাবনা’ অংশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্প্রেডশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

বিএনপির মতে, স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশগুলোর তথ্য সংযুক্ত না করলে বিভ্রান্তি তৈরি হবে।

গণতন্ত্র রক্ষায় নির্বাচন ও সংস্কারের গুরুত্ব

বিএনপি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হবে গণতান্ত্রিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। নির্বাচিত সরকার তখন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারবে।

ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কার ও বিএনপির ৩১ দফা

বিএনপি দাবি করেছে, ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে তারা আগে থেকেই কাজ করছে। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপি ৩১ দফার গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল, যা বর্তমান সংস্কার প্রক্রিয়ার ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।

অসাংবিধানিক নিয়োগের আশঙ্কা

বিএনপি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, সুপারিশগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের প্রবণতা রয়েছে, যা দলটির মতে অনভিপ্রেত ও গণতন্ত্রবিরোধী হতে পারে।

বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ থাকতে হবে এবং কোনো পক্ষের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত হওয়া যাবে না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশগুলো স্বচ্ছ ও জনমতের প্রতিফলন ঘটাবে কিনা, সে বিষয়ে দলটি সন্দিহান। বিএনপি মনে করে, সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চালিয়ে নেওয়াই সর্বোত্তম সমাধান

Leave a Reply