
আওয়ামী লীগ নামলে পুলিশের বলপ্রয়োগের অধিকার থাকবে: এনসিপি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের সাম্প্রতিক বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আওয়ামী লীগকে ‘দেশবিরোধী শক্তি’ ও ‘ভারতের এজেন্ট’ বলে অভিহিত করেন এবং তাদের আন্দোলনকে স্বীকৃতি না দেওয়ার কথা বলেন।
বক্তব্যের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য
এনসিপি আগামীকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে তাদের প্রাথমিক সংস্কার প্রস্তাব জমা দেবে, যেখানে ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স ২৩ বছর করার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর মধ্য দিয়ে দলটি তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরতে চাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সারোয়ার তুষার আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, তাদের কর্মকাণ্ডকে তারা আন্দোলন হিসেবে গণ্য করবেন না, বরং দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রয়াস হিসেবে দেখবেন। এর অর্থ হলো, এনসিপি সরকারবিরোধী আন্দোলনকে গণতান্ত্রিক স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত থাকলেও আওয়ামী লীগের কোনো পদক্ষেপকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করবে।
গণতান্ত্রিক মূল্যায়ন ও বিরোধী শক্তির অবস্থান
সারোয়ার তুষার যেভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। কারণ গণতন্ত্রে সব রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার থাকা উচিত। তিনি যে দাবি তুলেছেন, তা একপাক্ষিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছে। বিরোধী দলের আন্দোলনকে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হিসেবে না দেখে সরাসরি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ বলা হলে সেটি রাজনৈতিক বৈষম্য তৈরি করতে পারে।
পুলিশের ভূমিকা ও বলপ্রয়োগের প্রসঙ্গ
এনসিপি নেতা পুলিশের বলপ্রয়োগের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেটিও ভাবার বিষয়। যদি কোনো দল আন্দোলন করে, তাহলে সেটি দমন করার অধিকার পুলিশের থাকলেও সেটার মাত্রা ও যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
সংস্কার প্রস্তাব ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এনসিপি যেসব রাজনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আসছে, তা নতুন রাজনৈতিক ধারার ইঙ্গিত দিতে পারে। তবে তাদের বক্তব্যের কঠোরতা দলটির গণতান্ত্রিক মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। আগামী দিনে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তাদের আলোচনায় কী ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এনসিপির বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্টতই রাজনৈতিক মেরুকরণের অংশ। তাদের মূল উদ্দেশ্য যদি হয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা, তবে সব দলের রাজনৈতিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি। অন্যথায়, এটি কেবল প্রতিপক্ষকে দমনের কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হবে।