April 30, 2025
সব মামলা থেকে খালাস পেলেন তারেক রহমান, দেশে ফেরার পথ উন্মুক্ত

সব মামলা থেকে খালাস পেলেন তারেক রহমান, দেশে ফেরার পথ উন্মুক্ত

মার্চ ২১, ২০২৫

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সব মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। সর্বশেষ বসুন্ধরা গ্রুপের ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির হত্যা মামলা থেকেও তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক আবু তাহের এই রায় দেন। এর মধ্য দিয়ে ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়েছে।

দেশে ফেরার বিষয়ে গুঞ্জন

তারেক রহমান বিচারিক আদালতে সব মামলা থেকে খালাস পাওয়ার পর তিনি কবে দেশে ফিরবেন—এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, দেশে ফেরার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারেক রহমানই জানাবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন—
“তারেক রহমান যে কোনো সময় দেশে ফিরে আসতে পারেন। তাঁর নিরাপত্তাসহ সব বিষয় বিবেচনা করে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী তাঁর প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় আছেন।”

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন—
“তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে আর কোনো মামলা বিচারাধীন নেই। সব মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন বা নিষ্পত্তি হয়েছে। শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন এবং নিজেই সেই ঘোষণা দেবেন।”

খালেদা জিয়ার অবস্থান ও দেশে ফেরার পরিকল্পনা

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি তিনি লন্ডন গেছেন। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক জানান—
“খালেদা জিয়া আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ। তিনি এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফিরতে পারেন। তবে ফ্লাইটের সময় নির্ধারিত না হলে দু-একদিন এদিক-সেদিক হতে পারে। তিনি দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুত আছেন।”

তিনি আরও বলেন—
“আমরা তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম লন্ডনে ঈদ করে দেশে ফেরার জন্য। তিনি আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। চিকিৎসকরা তাঁর দেশে ফেরার বিষয়টি মাথায় রেখেই চিকিৎসা দিচ্ছেন।”

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা নিষ্পত্তি

বসুন্ধরা গ্রুপের ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির হত্যা মামলায় দায়মুক্তির জন্য ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় তারেক রহমানসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন:

  • সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর
  • তারেক রহমানের সাবেক পিএস মিয়া নুর উদ্দিন অপু
  • বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান
  • তাঁর দুই ছেলে সাফিয়াত সোবহান ও সাদাত সোবহান
  • বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আবু সুফিয়ান
  • ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল

আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া

তারেক রহমানের পক্ষে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন—
“এটি একটি ভিত্তিহীন মামলা ছিল। অন্যায়ভাবে তারেক রহমানসহ অন্যদের আসামি করা হয়েছিল। এক-এগারোর সময় রাজনৈতিকভাবে বিভাজন তৈরির জন্য এ মামলা হয়েছিল। প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।”

বিএনপির আইনজীবী বোরহান উদ্দিন জানান—
“তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেশে আর কোনো মামলা নেই। ফলে দেশে ফিরে রাজনীতি করতে তাঁর আর কোনো বাধা নেই।”

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা

তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং ভার্চুয়ালি দলের রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁর দেশে ফেরার গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে সংস্কার উদ্যোগের মাধ্যমে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে দলের রাজনীতিতে নতুন গতি আসবে।

তারেক রহমান সব মামলা থেকে খালাস পাওয়ার পর দেশে ফেরার জন্য আইনগত কোনো বাধা নেই। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে বহুল প্রত্যাশিত। আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তারেক রহমানের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

Leave a Reply