
২১ কোটি টাকা ঘুষের মামলা থেকে খালাস পেলেন তারেক রহমান
২০০৬ সালে বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বির হত্যাকাণ্ড এবং সেটি ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
রায়ের মূল বিষয়বস্তু
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ আবু তাহের জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ঘুষের অভিযোগের স্থান, তারিখ ও ঘটনার যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপিত হয়নি।
মামলার পটভূমি
- ২০০৬ সালের ৪ জুলাই হুমায়ুন কবির সাব্বির খুন হন।
- হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি মামলা দায়ের করে।
- ২০০৮ সালের ২৩ এপ্রিল তারেক রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
- একই বছরের ১৪ জুলাই আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন।
- পরে আসামিদের অনেকে হাইকোর্টে মামলা বাতিলের আবেদন করলে ২০০৬ সালে হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও প্রভাব
এ মামলার অন্যতম আসামি তারেক রহমান ২০০৮ সালে জামিনে মুক্ত হয়ে চিকিৎসার নামে যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। অন্যদিকে, মামলায় খালাস পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বিচারের গ্রহণযোগ্যতা ও আইনি বিশ্লেষণ
১. প্রমাণের অভাব: আদালত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। এটি বিচার ব্যবস্থার একটি সাধারণ নীতি যে কোনো আসামিকে দোষী প্রমাণের দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষের।
2. দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া ও স্থগিতাদেশ: মামলাটি প্রায় দুই দশক ধরে চলছিল, যার মধ্যে দীর্ঘ সময় উচ্চ আদালতে স্থগিত ছিল। এতে প্রমাণ সংগ্রহ ও সাক্ষ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়।
3. রাজনৈতিক প্রভাব: যেহেতু মামলার আসামিদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, এ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
এ রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে, বিশেষত যখন উচ্চপ্রোফাইল ব্যক্তিরা খালাস পান। তবে, বিচারালয় তার নিজস্ব নিয়ম ও আইনি কাঠামোর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি রাষ্ট্রপক্ষের জন্যও একটি বার্তা যে দুর্নীতির মামলা প্রমাণ করার জন্য তাদের আরও সুসংগঠিত ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।