
পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছে। তবে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ২৩টি দল এখনো মতামত দেয়নি। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৫টি দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। বিএনপি আরও সময় চেয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে মতামত দেবে বলে জানিয়েছে।
বিএনপির অবস্থান
- দলটির মতে, নির্বাচনবিষয়ক সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করুক, বাকি সংস্কার নির্বাচিত সরকার করবে।
- গণপরিষদ, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও প্রাদেশিক ব্যবস্থা চায় না।
- দলীয় ৩১ দফার আলোকে মতামত দেবে, তবে কমিশনের ‘স্প্রেডশিট’ও পূরণ করবে।
- নির্বাচিত সংসদই সংবিধান সংস্কার করবে বলে মনে করে বিএনপি।
- প্রধানমন্ত্রীর টানা দুই মেয়াদ সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষে, তবে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বিপক্ষে।
- নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ৯০ দিনে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাবে একমত।
- নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের পক্ষে।
জামায়াতের অবস্থান
- সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চায়।
- দ্বিকক্ষের বদলে বিদ্যমান সংসদ ব্যবস্থার পক্ষে।
- প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষে।
- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ আরও ১০ বছর বহাল রাখার পক্ষে।
এনসিপির অবস্থান
- গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পক্ষে।
- ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে।
- মতামত চূড়ান্ত করতে আরও সময় প্রয়োজন।
সংলাপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া
- জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৈঠক হয়।
- দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সংস্কার প্রস্তাব তৈরি হবে।
- ১৮ মার্চের মধ্যে মতামত দিতে বলা হলেও দলগুলো আরও সময় চেয়েছে।
- মতামত জমা দেওয়া দলগুলোর সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে সংলাপ শুরু হবে।
সংবিধান ও পুলিশ সংস্কার প্রশ্নে মতবিরোধ
- সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে।
- পুলিশ সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হয়নি; এটি নির্বাহী ক্ষমতার আওতায় থাকবে।
- পুলিশ স্বাধীন কমিশন চাইলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।
সংস্কার বাস্তবায়নের ছয়টি বিকল্প
দলগুলোর মতামত গ্রহণের জন্য ছয়টি বিকল্প রাখা হয়েছে—
- নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে
- নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে
- নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে
- গণপরিষদের মাধ্যমে
- নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে
- গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য স্পষ্ট। বিএনপি ও জামায়াত পৃথক অবস্থান নিলেও ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা চলছে। দলগুলোর চূড়ান্ত মতামতের ওপর নির্ভর করছে সংস্কারের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা।