July 16, 2025
ধর্ষণ মামলার বিচার আদালত চাইলে ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই করতে পারবে: আইন উপদেষ্টা

ধর্ষণ মামলার বিচার আদালত চাইলে ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই করতে পারবে: আইন উপদেষ্টা

মার্চ ১৭, ২০২৫

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের নতুন সংশোধনী: বিচার প্রক্রিয়ার গতি বাড়ানোর উদ্যোগ

সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে, যার ফলে ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুততর হবে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান যে, আদালত চাইলে এখন ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই ধর্ষণ মামলার বিচার করতে পারবেন।

এতদিন ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় বছরের পর বছর বিচারপ্রক্রিয়া ঝুলে থাকত। নতুন সংশোধনীর ফলে, যদি আদালত মনে করেন যে মেডিকেল সার্টিফিকেট ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য যথেষ্ট, তাহলে তিনি ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই মামলার রায় দিতে পারবেন। এটি বিচার ব্যবস্থাকে গতিশীল করার জন্য একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

আইনের অন্যান্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে:

  1. শিশু ধর্ষণ মামলার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন – শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পৃথক আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
  2. ধর্ষণের সংজ্ঞার সম্প্রসারণ – নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, ধর্ষণকে শুধু পুরুষ কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ হিসেবে না দেখে, যেকোনো ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া, ধর্ষণের বিভিন্ন রূপকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে, যা আগে আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল না।

আইন উপদেষ্টা জানান, সংশোধিত আইনটি আগামী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে পারে এবং দ্রুত গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, মাগুরার সাম্প্রতিক আলোচিত হত্যা ও ধর্ষণ মামলার বিচারের সঙ্গে এই সংশোধনীর কোনো সম্পর্ক নেই। ওই মামলার বিচার তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলছে এবং শিগগিরই ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলার কার্যক্রম শুরু হবে।

বিশ্লেষণ ও প্রভাব

এই সংশোধনী বিচার ব্যবস্থার গতি বাড়াতে ও ধর্ষণ মামলাগুলোর দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে দেশে ধর্ষণের বহু মামলা বছরের পর বছর ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় ঝুলে থাকে, যা ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা। নতুন আইন অনুযায়ী, মেডিকেল ও অন্যান্য সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দ্রুত রায় প্রদান সম্ভব হবে, যা বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করবে।

এছাড়া, ধর্ষণের সংজ্ঞার সম্প্রসারণ এবং শিশু নির্যাতন মামলার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করবে। তবে আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ নজরদারি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে নিরপরাধ কেউ আইনের অপব্যবহারের শিকার না হয়।

সার্বিকভাবে, নতুন সংশোধনী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ধর্ষণের শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করবে।

Leave a Reply