July 8, 2025
সাত কলেজের জন্য ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’

সাত কলেজের জন্য ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’

মার্চ ১৬, ২০২৫

সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার পর অবশেষে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে এর কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির সফল বাস্তবায়নের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এই সিদ্ধান্তের পেছনে কয়েকটি দিক বিশেষভাবে লক্ষণীয়—

১. শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলাফল

২০১৭ সালে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক দুর্বলতা, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে দেরি, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের অক্টোবরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে এবং সাত কলেজকে নিয়ে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবি জানায়। সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপের পর এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনা হয়।

২. প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও বিশেষ কমিটির ভূমিকা

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার বিশেষ কমিটি গঠন করে, যা সম্ভাব্যতা যাচাই, ক্যাম্পাস পরিদর্শন, সম্মানজনক পৃথকীকরণ এবং শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। দীর্ঘ তিন মাসের আলোচনা ও গবেষণার পর কমিটি সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দেয় এবং প্রস্তাবিত নাম আহ্বান করে।

৩. ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামকরণের যৌক্তিকতা

নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনায় আনা হয়:

  • সাত কলেজের অবস্থান ও গুরুত্ব: সাতটি কলেজই রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং দেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
  • আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা: ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামটি আন্তর্জাতিকভাবে সহজবোধ্য ও পরিচিত হবে।
  • অধিভুক্ত কলেজগুলোর অভিন্ন পরিচয়: পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার ফলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি হবে, যা আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকার কারণে কিছুটা অনিশ্চিত ছিল।

৪. প্রশাসনিক চূড়ান্ততা ও পরবর্তী ধাপ

এই নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হলেও এটি এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর উপদেষ্টা পরিষদে পাস হতে হবে এবং সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে অধ্যাদেশ জারি করা হবে।

সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা সময়মতো একাডেমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে, প্রশাসনিক জটিলতা কমবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্য যথাযথ নীতি, পর্যাপ্ত অবকাঠামো, দক্ষ প্রশাসন এবং শিক্ষকদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই নতুন প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনার দিকে যত্নবান হলে এটি দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।

Leave a Reply